শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৯

বশীকরণ কি .কেন .কখন .কাকে কোথায় ও কিবাবে করবেন.


বশীকরণ কি? কেন, কখন, কাকে, কোথায় ও কিভাবে করবেন?

আমাদের আজকের বিষয়টি তান্ত্রিকতার সবথেকে জনপ্রিয়, অত্যাধিক ব্যবহৃত, বিশ্বের সকল স্থানের সকল সময়ের শ্রেষ্ট চাহিদা সম্পন্য তদবীর বা তন্ত্র যার নাম বাংলায় “বশীকরণ/বশিকরন”। আজ আমরা জানবো বশীকরণ কি ? কেন, কাকে, কখন, কিভাবে বশীকরণ করা যায় বা করবো। এবং এ বিষয়ের উপর সংশ্লিষ্ট সকল বিষয় পর্যায়ক্রমে আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করবো।
বশীকরন-একটি তান্ত্রিক বা আধ্যাত্মিক প্রকৃয়া যা দ্বারা একজন মানুষের স্বাভাবিক বিরুপ মনকে মন্ত্র, তন্ত্র, যন্ত্র, দোওয়া, তাবিজ, টোনা, টোটকা ইত্যাদি প্রয়োগের মাধ্যমে নিজের প্রতি আকৃষ্ট বা আয়ত্বে আনা যায়। মনে রাখতে হবে- মানুষের মন কোন যন্ত্র চলিত ইঞ্জিন নয়, যে এর কোন একটি পার্টস পরিবর্তন করে দিলেন আর সাথে সাথে আপনার পিছু ধাওয়া করলো। তবে হ্যা এটিও সত্য যে বর্তমান হিপনোটাইজ, মেসমেরিজম, ত্রাটক ইত্যাদির দ্বারা সাময়ীক ভাবে একজন মানুষের সম্পূর্ণ জ্ঞান, বোধ, বুদ্ধি হরন করে তাকে দিয়ে তাৎক্ষণিক কোন কার্য সম্পাদন করানো যায়। (এ বিষয় বিস্তারিত প্রশিক্ষণ ও আলোচনা আমাদের অন্য একটি অধ্যায়ে করা হয়েছে) তবে সেটি বশীকরণ নয়। বশীকরণ করতে অবশ্যই সময়ের প্রয়োজন সময় লাগবেই, কারন এটি তো অন্য কিছু নয়, মানুষ্য মন, যে মনের জন্যই আজ সে আঠারো হাজার মাখলুখের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার, এটিকে পরিবর্তন হতে কিছু সময় নেওয়াটাই স্বাভাবিক, না নেওয়াটা ভন্ডামী। তদবীরের প্রখরতার উপর নির্ভর করে ৭-১৮০ দিন কিংবা তার বেশি সময়ও লাগতে দেখা গেছে। একটি মানুষকে বশীকরণ করার তদবীর যদি আপনি একজন সৎ তান্ত্রিক দ্বারা করিয়ে থাকেন তবে আজ বা কাল বা একটি সময় সেই ব্যক্তি বশীকরণ হবেই হবে, এটি নিশ্চিত ধ্রব সত্য-কারন বিজ্ঞান বলে প্রতিটি কাজের একটি ফলাফল থাকতেই হবে, সেটা যেমন’ই হোক।
কেন একজনকে বশীকরণ করবো বা করা হয়, এর প্রয়োজনীয়তা কি? মানুষ সামাজিক জীব, সমাজে বাস করতে তাকে সকলের সাথে মিশতে হয়, প্রয়োজনের তাগিদেই অন্যের সাথে সখ্যতা তৈরী করতে হয়। আবার হৃদয় ঘটিত ব্যপার তো রয়েছেই। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, মানুষের নিজ স্বার্থের প্রয়োজনে যখন একজন মানুষকে অনেক বেশি প্রয়োজন পরে আর সেই ব্যক্তিটি তার আহ্বানে সারা না দেয় তখনি বশীকরণ করার চিন্তা বা প্রয়োজনীয়তা দেখা যায়। শুধু তাই নয়, স্বামী স্ত্রীর সর্ম্পক্যের মাঝেও তৃতীয় পক্ষের অনুপ্রবেশের কারনে বা মন মালিন্যের কারনে বিভেদ সৃষ্টি হয়। আপনি বিবাহিত অথচ অন্য আরেকটি মেয়েকে বা অন্যের স্ত্রীকে হটাৎ পছন্দ হয়ে গেলো, আপনার স্বামী হয়তো আপনার শারীরিক, মানুষিক বৈষয়িক কোন চাহিদা মেটাতে অপারগ এমতাবস্থায় আপনি অন্যের প্রতি আকর্ষিত হয়ে পরলেন এমনি হাজারো পরকীয়া ঠেকাতে, পরকীয়া করতে। আপনার সন্তান আপনার অবাধ্য, আপনার পিতা/মাতা আপনার অন্য কোন ভাই/বোন/ বোন জামাইয়ের প্রতি আসক্ত আপনাকে পাত্ত্বা দেয় না। আপনার ভাই বোনের সাথে আপনার মিল হচ্ছে না। আপনি হটাৎ কোথাও বেড়াতে গিয়ে কোন রূপসী যুবতী/যুবকের প্রতি আসক্ত, হতে পারে সে নেহায়েৎ গরিব ঘরের যে কারনে আপনার সাথে সর্ম্পক্য করার সাহস পাচ্ছে না। এমনও হয় সে উচ্চ বংশের আপনাকে পাত্তা দিচ্ছে না। সে অন্য পুরুষ বা মেয়েতে আসক্ত, তবুও আপনি তাকে পেতে চাইছেন। আপনার অফিসে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আপনার বস আপনার  প্রতি সহানুভুতিশীল নয়, অন্যের প্রমোশন হচ্ছে আপনার হচ্ছে না, আপনার সহকর্মী যে আপনার ফেভারে থাকলে আপনার সুবিধা হতো কিন্তু সে আপনার প্রতি বিরুপ। আপনি রাজনীতি করেন কিন্তু আপনার প্রতি আপনার উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের তেমন একটা সু নজর নেই, আপনি আপনার যোগ্য স্থান পাচ্ছেন না। আপনি কোন মেয়ে বা ছেলে কে জান প্রাণ দিয়ে চাইছেন কিন্তু তাকে কোন ভাবেই বোঝাতে বা বলতে পারছেন না। আপনি এমন একজনকে পছন্দ করেন যে কি না সর্ম্পকে আপনার সামজস্যপূর্ন নয়, যে সর্ম্পক্যটি অসামাজীক, তবুও আপনি চাইছেন, সে আপনার ধর্মের বা গোত্রের না, যা সমাজ বিরোধী যে কারনে বিপরীত ব্যক্তিটি আপনার আহ্বানে সারা দিচ্ছে না, আপনি যাকে চাইছেন সে আপনার বয়েসে অনেক বড়, ছোট, গরিব, বড়লোক, ভিন্ন ধর্মের, দেখতে সুন্দর, কুৎসিত, সামাজীক স্ট্যাটাস অনেক উঁচু, নিচু ইত্যাদি হাজারো ভিন্নতার কারনে বিপরিত ব্যক্তিটি আপনার প্রতি বিরুপ, বিতৃষ্ণ, সাড়া দিচ্ছে না সে সকল ক্ষেত্রে আমাদের প্রথম পদক্ষেপ বশীকরণ। এর মাধ্যমে নিজের ইচ্ছের সাথে তার ইচ্ছের সংমিশ্রন ঘটানো হয়, বা ঘটাতে বাধ্য করা হয়। এই বশীকরণ যে সকল সময় মঙ্গলের জন্যই করা হয়ে থাকে তা কিন্তু নয় অনেক সময় দেখা যায় নিজ স্বার্থ সিদ্ধির জন্য, অসৎ উদ্দেশ্য চারিতার্থ করার জন্য, অসামাজিক কার্যকলাপের জন্যেও কিছু অসাধু ব্যক্তি করে থাকে। যা সকল সময় সমাজের জন্য হিতকর নাও হতে পারে, আবার কোন ক্ষেত্রে একজনের জীবন বাচানোর তাগিদেও বশীকরণ জরুরী হয়ে পরে। যাই হোক এ সকল ক্ষেত্রেই আমরা বশীকরণের প্রয়োগ দেখতে পাই।
এখানে আমরা জানলাম কেন এবং কাকে বশীকরণ করার প্রয়োজন হয় এবার আলোচনা করবো কখন কি ভাবে করা হয় বা হবে। অনাদীকাল হতেই এই কাজটি সমাজের তান্ত্রিক, ফকির, বেদে, পীর, ওঝা, হুজুর, মাওলানা, আধ্যাত্মিক সিদ্ধ পুরুষ এই সকল সম্প্রদায়ের লোকেরাই করে থাকে। কারন এই কাজগুলো আমরা সাধারন মানুষ জানলেও তা করে তেমন ফল পাওয়া যায় না। এই কাজগুলোতে সাধারনত গ্রামীন সমাজ টোনা, টোটকা, জড়ি, বুটি, তাবিজ, কবজ ইত্যাদি ব্যবহার করে আসছে।
আমাদের সর্বসাধারনের আজ এটি জানা অত্যান্ত জরুরী যে কি কি দ্বারা বশীকরণ করা হয়ে থাকে- বর্তমান সময়েও দেখা গেছে তাবিজ, কবজ, যন্ত্র সাধারন ভাবে গাছের উপর টাঙ্গিয়ে, গাছের গোড়ায় পুঁতে, কিছু খাওয়ানো, শরীরে র্স্পশ্য করে, পায়ের নিচে, বিছানায় মাথার নিচে রেখে, ঘরে রেখে, বাড়ীতে কোথাও টাঙ্গিয়ে, নিজের সাথে গলায় বা হাতে ব্যবহার করে, শ্মশানে/কবরস্থানে, বহমান নদীতে, জঙ্গলে পুঁতে, বিভিন্ন প্রাণীর অংশ বিশেষ ব্যবহার করে, শরীরের ব্যবহৃত কাপড়, চুল, নখ, গাত্র ময়লা ইত্যাদি সংগ্রহ করে, ছবি, নাম, জন্ম তারিখ, পিতা মাতার নাম দিয়ে। চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে থেকে, কথার মাধ্যমে তান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বিপরীত লিঙ্গকে বশীকরণ করা হয়, আর সাধারন ভাবে কোনও ব্যক্তি তার রুপ, গুন, অর্থ সম্পদ ইত্যাদি দিয়েও অন্যকে প্রভাবিত করে থাকে। কিন্তু বর্তমান সময়ে একটি প্রতারক ভন্ড তান্ত্রিক সম্প্রদায় সর্বসাধারনের মাঝে একটি কথা বেশ জোড়ালো ভাবেই ছড়িয়েছে যে নানা রকম আসন, চালান দ্বারা, জ্বীন, পরী, কালী সাধনা দ্বারা অন্যকে বশীকরণ করে দেয়। মনে রাখবেন এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট, ভুয়া একটি কথা, সাধারনের মস্তিষ্কে এটি বর্তমানে একটি ভাইরাসের মতই ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে যে, এ ভাবে অন্যকে বশীকরণ করা যায় বা হয়।
দেখুন এই সাধনাগুলো (জ্বীন, পরী, কালী বা এ ধরনের শক্তি সাধনা) মূলত যারা বা যেনারা করে থাকে তা একান্তই ব্যক্তি স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্য নিয়ে। কখনই এ সকল শক্তি সাধক ব্যক্তি আপনাকে এই শক্তির দ্বারা আপনার আকাঙ্খীত ব্যক্তিকে বশীকরন করানো কাজ করবে না বা করানো সম্ভব নয়। কারন যে শক্তি আপনার নিয়ন্ত্রনাধিন নয়, যে শক্তি সাধন করতে আপনাকে সময় শ্রম অর্থ ব্যয় করে তার অনুগ্রহ লাভ করতে হয়, সেই শক্তিকে কোন ভাবে কি ভৃত্যের কাজ করানো সম্ভব??? হ্যা এ কথা সত্য যে আপনি যদি এমন কোন শক্তির সাধনা করেন, যদি আপনি এ শক্তির নিয়ন্ত্রক হয়ে থাকেন তবে তার মাধ্যমে আপনি আপনার প্রয়োজনানুসারে কোন স্বার্থ হাসিল, সম্পদ লাভ, কাউকে পছন্দ করলে তাকে নিয়ন্ত্রন করা ইত্যাদি করলেও করতে পারেন। কিন্তু তাকে আপনি কোন ভাবেই দাস বানাতে পারবেন না। অথচ আমাদের সমাজে এক শ্রেনীর অসাধু তান্ত্রিক নামধারী সর্বসাধারনের আবেগ অনুভুতী নিয়ে প্রতারনার ফাদ পেতে এটি বোঝায় যে তার নিকট জ্বীন, পরী, কালী ইত্যাদি রয়েছে এবং সে এই শক্তির দ্বারা নিমিশেই (কয়েক ঘন্টা বা কয়েকদিনেই আপনার আকাঙ্খীত ব্যক্তিকে আপনার বশে এনে দিবে)। একটি কথা মনে রাখবেন বর্তমান যুগে যে সকল তান্ত্রিকতা করা হয় বিশেষ করে তাবিজ, কবচ/কবজ, যন্ত্র ইত্যাদি করতেও একজন মানুষকে যতটুকু ন্যায়, নিতিবান, সৎ সিদ্ধ পুরুষ হতে হয়, আত্মিক সংগতি, আধ্যাত্মিকতার প্রয়োজন পড়ে বর্তমান সমাজে তার বড়ই অভাব। আমাদের গবেষনায় ও বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা গেছে বড় বড় সাইন বোর্ড ধারী অসংখ্য তান্ত্রিক নামধারী ব্যক্তি যারা বোম্বায়, দিল্লী, মাদ্রাজ, কলকাতা, ঢাকা, চট্টগ্রামের মত বড় বড় শহরে স্থাপনা গেড়ে বসে রয়েছে তেনাদের ৯৮% তান্ত্রিক’ই ফেইক। অনলাইন জগতে ইদানিং কালে অসংখ্য তান্ত্রিক সোস্যাল মিডিয়ায়, ওয়েব সাইড দিয়ে বসে রয়েছে যাদের মধ্যে অষ্ট্রেলিয়া, আমেরিকা, ইন্ডিয়া ও বাংলাদেশের ২-১ টি ছাড়া সকল সাইড ভুয়া ও ফেইক, যার অধিকাংশ সাইড অপ্রাপ্ত বয়ষ্ক কিছু ছেলেদের দ্বারা কপি পেষ্ট তৈরী নতুবা প্রতারনার ফাঁদ। এ বিষয় কোন সাহায্য নিতে বা তদবীর করানোর পূর্বে অবশ্যই সাইডগুলোর জন্ম হিষ্ট্রি দেখে তদবীর নেওয়ার জন্য অনুরোধ রইলো। নতুবা আপনার মূল্যবান সময়, শ্রম, অর্থ, চোখের জ্ল সকল কিছুই বৃথাই নষ্ট হবে।
সাধারন ভাবে দেখা গেছে বর্তমান যুগে পানি পড়া, মিষ্টি পড়া, ধূলা পড়া, পান পড়া, ফুল পড়া ইত্যাদি সহ যে কোন ধরনের তাবিজ, কবজ, গাছে টাঙ্গিয়ে, শ্মশানে বা কবরে পুতে, নদীতে ফেলে তার ফল পেয়েছে এমন মানুষ খুজে পাওয়া আর ডায়নোসর খুজে পাওয়া সমান। তবে এখনো যে এ সকল তদবীর হয় না সেটি বলা হচ্ছে না, বর্তমান সময়ে আমরা যদি মিডিয়ায় নজর রাখি তবে হয়তো আমরা দেখবো অনেক অনেক তান্ত্রিকতা সচল রয়েছে তবে তার প্রয়োগ বিধি পরিবর্তীত হয়েছে। ইউটিউব ভিডিওতে, এ্যন্ড্রোয়েড এ্যপে এমন হাজারো বশীকরণ তদবীরের দেখা মেলে কিন্তু বাস্তবিকে এ সকল কিছুই ভূয়া বা ফেইক, এগুলো দেখে বা এর পিছনে সময় শ্রম অর্থ নষ্ট করা সম্পূর্ণই বৃথা।
তাহলে কি ভাবে আপনি কাউকে বশীকরণ করবেন ? প্রথমত আপনাকে একটি কথাই পুনরায় বলবো আর তা হচ্ছে আপনার উর্বর মস্তিষ্ক্য ব্যবহার করুন, নিজের চিন্তার উন্নতি ঘটান, দৃষ্টি শক্তির প্রসার ঘটান তবে হয়তো এ সকলের মধ্যে সত্যিকারের তান্ত্রিকদের খোজ আপনি পেয়ে যাবেন। যার দ্বারা আপনার মনোরথ পূর্ণ হবে। যে আপনার মনের মানুষটিকে আপনার মনের সাথে মিলিয়ে দিবে। কখনই এই একটি বিষয় তারাহুড়ো করবেন না। মনে রাখা জরুরী তান্ত্রিক বিদ্যা বা কাজ গুরুমুখি, গোপন বিদ্যা। বিধায় আপনি কোন তান্ত্রিকের নিকট যাচ্ছেন আপনার বাবা, মাকে, বন্ধু বান্ধব বা আত্মিয় পরিজনকে সাথে নিয়ে তাদের বলে যাচ্ছেন তো আপনার কাজটি হবে না। হওয়ার সম্ভবনা নেই, আধ্যাত্মিক কাজ বিশেষ করে বশীকরণের ক্ষেত্রে আপনি যাকে বশীকরণ করছেন অদুর ভবিষ্যতে তাকেও আপনি এ ব্যপারে বলতে পারবেন না। এই কাজগুলো একাই করতে হয়। যদি স্রষ্টাকে বিশ্বাস করেন তবে একটি বিষয় উপলব্ধি আছে নিশ্চয়, কাউকে বলে যদি আপনি স্রষ্টার নিকট কিছু চান তবে তা কখনই পূরণ হবে না, আপনাকে তার কাছে চাইতে হবে গোপনে, সকলের অগচরে, একান্তই নিজেস্ব ভাবে অন্তরের সমস্ত আকুতি দিয়ে। তান্ত্রিক কাজ করানোর পূর্বে যার নিকট কাজটি করাচ্ছেন তার উপর আপনার পূর্ণ বিশ্বাস আস্থা থাকাটাও অত্যন্ত জরুরী। কেননা বিশ্বাসের নুণ্যতম ঘাটতিও আপনাকে সফল হওয়া হতে পিছিয়ে দেবে।
বর্তমান সময়ে কিছু আধুনিক রীতিতে তান্ত্রিক নিয়ম প্রয়োগ হচ্ছে, যার সাথে রয়েছে হিপনোটাইজম বা ত্রাটকের কিছু অংশ্য, এতে দূরে থেকে কিংবা কাছে থেকে যে কোনও ভাবেই বিপরীত লিঙ্গকে খুব সহজেই কনভেন্স করা যাচ্ছে। তবে আপনার এও যানা উচিৎ সকলের ক্ষেত্রেই সকল প্রয়োগ সমান নয়, বিশেষ করে আপনি যাকে বশীকরণ বা কনভেন্স করবেন সে কোন শ্রেনীর ব্যক্তি বা নারী সেটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারন কখনই একটি সাধারন অল্পশিক্ষিত, সকলের সাথে সমান ভাবে মেশা নারীকে বশীকরন করা আর একটি শিক্ষিত সম্ভ্রান্ত ঘরের নারীকে বশীকরণ করা এক কথা বা একই কাজ নয়, একজন সাধারন পুরুষকে বশীকরণ করতে যে শক্তি সময় শ্রম ব্যয় হয় একজন জনপ্রতিনিধিকে বশীকরণ করতে তার চাইতে অনেক বেশি সময় শ্রম শক্তির ব্যয় হবে, আর এটাই স্বাভাবিক। পূর্বের ন্যায় বর্তমান সময়ে ১০-২০ টাকা হাদিয়ায় হুজুরদের তাবিজে কাউকে বশ করা সম্ভব হয় না। কেউ করেও দিবে না। এ বিষয়গুলো মানতে হবে। আপনি যাকে আপনার জীবনের চাইতে বেশি চাইছেন তার ভালোবাসার নিকট অবশ্যই আপনার অর্থ ও শ্রম মুখ্য হওয়া উচিৎ হবে বলেও আমরা মনে করি না। একজন রাজনীতিবীদ নির্বাচনে জয়লাভ হতে জনগন ও জনপ্রতিনিধিদের কনভেন্স করার প্রয়োজন পরে এমন স্থানে যদি সে মনে করে একটি মাজারে ১০০-২০০ টাকা হাদিয়া দিয়ে একটি তেলেসমে কারামতি মিশরীয় বশীকরণ কবজ বা আজমির/ফুরফুরা শরীফের নামী কোন তাবিজ হাতে পড়লেই কুল্লু খালাসুন তবে তাকে বুদ্ধিমান বলা উচিৎ হবে না।
আমরা সর্বসাধরণের উদ্দেশ্যে বলবো বশীকরণ কখনই সকলের জন্যই একই রিতি নয়, প্রয়োজনের তাগিদে একজনকে বা একের অধিকজনকে একই সংগে বশীকরণ করার প্রয়োজন পরতে পারে, সকল ক্ষেত্রেই একই তন্ত্র বা বিধি কার্যকারি নয়, একজন পুরুষ ও একজন নারীকে বশীকরণের তদবীর কখনই একই নয়। একই সংঙ্গে ঘুরে বেরানো দুই বান্ধবিকে কনভেন্স করতে একই তদবীর কাজ হবে এমন সম্ভবনা শুন্য। বশীকরণ বিদ্যা মিথ্যা নয়, নতুবা আপনার আমার পূর্বপুরুষগণ সকলেই মিথ্যা প্রমানিত হবে। তবে পূর্বে যা যত সহজ ছিলো এখন তত সহজ নয়, পূর্বে যা যে ভাবে মিলতো এখন তা সেভাবে মিলে না, এ সকল কিছু আপনাকে মানতে হবে জানতে হবে।  আপনারা যারা আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল নন, তেনারা আমাদের ওয়েবে প্রদত্ত স্বয়ংসিদ্ধ কিছু টোটকা রয়েছে সেগুলো সঠিক নিয়মে করে দেখতে পারেন প্রয়োজনে আমাদের সাহায্য নিয়ে করতে পারেন, কারন আপনি যখন নিজের কাজ নিজে করবেন সেখানে থাকবে আপনার গভীর ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ, যার জন্য করছেন তাকে পাওয়ার প্রচন্ড ইচ্ছে, বিশ্বাস, শ্রদ্ধা, বিণয় বিধায় কাজটি হলেও হতে পারে এবং হওয়ার সম্ভবনাই ৯০%, যেনারা সময়, শ্রম,  প্রয়োজনীয় ইকুইপমেন্ট কালেক্ট করতে অপারগ, ধর্মিয় আচার বিধি নিশেধ থেকে সর্বদা দুরে রয়েছেন তারা নিজেরা করে তেমন ফল পবেন না। বিধায় আমাদের স্বরনাপন্ন হতে পারেন নতুবা অবশ্যই ভালো ভাবে দেখে শুনে কোন সৎ যোগ্য তান্ত্রিকের নিকট গিয়ে মনের আকুতি জানাবেন, তার যথাযথ সন্মানী প্রদান করবেন, তাহলে সে চাহে তো আপনার কাজটি অনায়েসে করে দিবে। আমরা চাইনা কেউ সারাটি জীবন তার প্রিয় হারানো বেদনা বুকে বয়ে নিয়ে বেড়াক, বা কোনও প্রতারকের ক্ষপ্পরে পরে সর্বশান্ত হয়ে আজীবন তান্ত্রিকতা ভুয়া, ভন্ডামী এসব কাজ হয় না, সব তান্ত্রিক ফেইক এসব বলে বেরাক। আমরা এ কারনে আপনাদের সাধ্য ও আকাঙ্খার বিচারে প্রয়োজনে সম্পূর্ণ ফ্রিতেও কাজ করে দিতে প্রস্তুত তবে মনের আগ্রহ বা সন্দেহ মেটাতে কাজ করতে প্রস্তুত নই।
আপনারা আমাদের এই বশীকরণ বিষয়ক পোষ্টটিতে কিঞ্চিৎ উপকৃত হলে আমাদের শ্রম সার্থক হবে বলে মনে করছি। সকলের মঙ্গল কামনা রইলো।  যে কোন বশীকরন করার জনো কল করুন. 01757786808

বশীকরন কাজল প্রয়োগ

পুরুষ বশীকরণে কাজলের প্রয়োগঃ
ভালোবাসা কাজল বা বশীকরণের কাজল মূলত কাউকে বশীকরণের জন্যই ব্যবহৃত হয়। এই কাজল সাধারণ না এটি অতি বিশিষ্ট বা প্রভাবশালী হয়। এই কাজলকে শুধুমাত্র বশীকণে বা সম্মোহনের জন্যই ব্যবহার করা হয়। সামান্য কারণের জন্য এর প্রয়োগ করা নিষেধ। এটি বানাবার নিয়মাবলী আমরা আপনাদের জানাবো। তবে একটি কথা মাথায় রাখা জরুরী যে গুরু ছাড়া এ সকল কাজ করে তেমন কোন ফল আশা করা অনর্থক।
সর্বপ্রথম কোন জায়গা থেকে খুঁজে এমন একটি বিড়াল আনতে হবে যার সারা দেহ কালো লোমে ঢাকা। এরুপ বিড়াল পেলে তার গোঁফ কেটে নিজের কাছে রাখতে হবে। এবার এই চুলগুলি তুলো সহ পাকিয়ে পলিতা তৈরী করে তা ঘি এর প্রদীপে দিতে হবে। মধ্যরাতের পরে ঐ প্রদীপকে একটি নিরিবিলি ঘরে নিয়ে গিয়ে নিজ প্রেমিক বা প্রেমিকার ঘরের দিকে মুখ করে প্রদীপটা রাখতে হবে এবং প্রদীপের পলিতায় আগুন দিতে হবে। এই প্রদীপের উপর কোনও বড় বা কাঁচ রেখে কাজল তৈরী করতে হবে। যতক্ষণ প্রদীপ জ্বলবে ততক্ষণ নিচের মন্ত্রটি জপ করতে থাকবে।
মন্ত্রঃ “কালী কালী মহাকালী, কালী চলে আঁধীরাত, কালী বসে আঁধীরাত, কালী লাবে মহাকালী উসে মেরী মুহব্বত মেঁ দীবানা বানায়ে।”
এই বিধিমেনে কাজলটি তৈরী করে নিজের চোখে লাগিয়ে আপনি যাকে ভালোবাসেন তার নিকট গেলে সে আপনাকে দেখলেই আপনার প্রতি তার ভালোবাসা সৃষ্টি হবে। মন্ত গুরু . আজিজ রহমান . খুলনা . খালিস পুর বাজার ফোন  01757786808

বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৯

পরী সাধনা


পরী সাধনা

 অর্থ ধন-সম্পদ এবং প্রভাবশালী হওয়ার উপায়ঃ

সর্বাগ্যে আমাদের জানা প্রয়োজন পরী সাধনা কে করবে? কেন করবে? জগতে যতগুলো শক্তি সাধনা রয়েছে তার প্রতিটির’ই রয়েছে নির্দিষ্ট কিছু উদ্দেশ্য। আমরা আমাদের নিজ ব্যক্তি সাধনা সিদ্ধির জন্যই বিভিন্ন সাধনা করে থাকি। অনেক সাধনা রয়েছে অর্থ প্রাপ্তির জন্য, অনেক সাধনা সম্নান প্রতিপত্তির জন্য, অনেক সাধনা সাংসারিক জীবনে সুখ প্রাপ্তির জন্য। তেমনি পরী সাধনার রয়েছে নির্দিষ্ট কিছু উদ্দেশ্য। অনেক মেয়ে বা নারী আমাদের নিকট পরী সাধনা করার জন্য অভিপ্রায় ব্যক্ত করে থাকেন। কিন্তু বাস্তবিকে পরী সাধনা কোন মেয়েলি সাধনা নয়, কোন নারী এই সাধনায় বিন্দু পরিমান উপকৃত হবে বলে মনেও হয় না। পরী সাধনা মূলত পুরুষদের জন্য একটি সাধনা, এই সাধনার মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে অবিবাহীত পুরুষের আত্মিক ও যৌবিক চাহিদা পূর্ণ করা ও সেই সাথে আর্থিক অনটন থেকে মুক্তি, তবে কেউ যদি শুধু আর্থিক উন্নতীর জন্য এই সাধনা করেন তবেও সে নিশ্চিত বিফল হবে। কারন এখানে বিষয়টি এমন যে আপনি একটি বিত্তশালী মেয়েকে বিয়ে করলেন এতে করে আপনার যেমন একটি নারী সঙ্গ হলো সেই সাথে আপনার আর্থিক সহযোগিতা হলো কিন্তু যদি মেয়েটিকে বিয়ে না করেন তবে সে আপনাকে ভিক্ষাও দিবে কি না সেটি অনিশ্চিত!!! তেমনি পরী সাধনার ক্ষেত্রটিও এমনি। তবে এ যাবৎ পর্যন্ত যতগুলো শক্তি সাধনার সাথে আমরা পরিচিত হয়েছি, সাধনা বিধি দেখেছি, ক্লাইন্টদের সফলতার হার নিরিক্ষণ করেছি তাতে পরী সাধনার মত সহজ সরল কোন সাধনা জগতে নেই, স্বল্প সময়ের কম পরিশ্রমে এর চাইতে ভালো কোন সাধনাই জগতে নেই। তবে এখানে একটাই জটিল শর্ত হচ্ছে যে কোনও লুচ্চা প্রকৃতির, নারী দেহ লোভি, বিবাহিত পুরুষের দ্বারাও এ সাধনা সম্ভব নয়। এই সাধনায় ভয় ভিতির বা কোন শারীরিক ক্ষতির আশংকা নেই। আপনি যদি পরবর্তীতে বিয়ে করতে চান তবেও সমস্যা নেই তবে আপনি বিয়ে করলে বা অন্য নারীতে আশক্ত হলে এই সাধনা আপনা হতেই বিলিন হয়ে যাবে।
আমরা এ যাবৎকাল পর্যন্ত পরী সাধনার জন্য সর্বমোট তিনটি প্রকৃয়া বা নিয়ম সংগ্রহ করতে পেরেছি যার মধ্যে এশিয়া মহাদেশের পরিমন্ডলে দুটি নিয়মে সাধনাটি খুব সহজেই সফল হয়। আমরা আপনাদের সাথে পর্যায়ক্রমে এ দুটি নিয়ম নিয়েই আলোচনা করবো। তবে পূরনো কথাটি আবারও নুতন করে বলছি (কখনোই আপনি সিদ্ধগুরুর স্বার্নিধ্য ছাড়া একা কোন সাধনা করতে যাবেন না।)
মন্ত্রঃ ”বিসমিল্লাহী রাহিমান রাব্বে ইন্নি মঙ্গল ফান্তসির”
সাধনা বিধিঃ প্রথমেই গুরুর আর্শিবাদ প্রাপ্ত হয়ে তার অনুমতি সাপেক্ষে একটি শুভ সময় মন্ত্রটি নির্দিষ্ট সংখক বার জপ করে সিদ্ধ করে নিতে হবে। এবার আপনাকে এমন একটি গৃহ নির্বাচন করবেন যে ঘরে কোন মহিলার যাতায়াত নেই বা কোন নারী সেখানে প্রয়োজনেও যায় না। এবার আপনাকে আপনার পোশাক নির্বাচন করতে হবে, পরী সাধনার জন্য রেশমী বা পশমী কাপড়’ই উপযুক্ত, আপনি খুব রঙ্গিন অর্থাৎ ঝকমকে নতুন পোষাক পরিধান করবেন সেই সাথে মাথায় পাগড়ি বা বিয়ের সময় বর যে ধরনের টোপড় পরে তেমন নতুন সুন্দর টোপড় পড়তে পারেন। এবার চন্দ্রমাসের প্রথম রাত্রি হতেই ( সেদিন যদি বৃহষ্পতিবার হয় তবেই ভালো) একটি পাঠ বা মোটা কাপড়ের তৈরী সবুজ রঙ্গের আসন পেতে বসবেন। সামনে বড় মাপের তিনটি তিন রঙ্গা মোমবাতি জ্বালাবেন, ঘরে সুগন্ধি ছড়িয়ে দিবেন, নিজ শরীরেও সুগন্ধি ব্যবহার করবেন, প্রয়োজনে ঘরে কিছু টাটকা সুগন্ধি ফুলের ব্যবস্থা করে রাখতে পারেন, এবার একটি তামা বা পিতলের থালায় আমাদের নিকট হতে প্রাপ্ত নকশাটি কস্তুরি, মেশক, গোলাপ জ্বল দিয়ে সুন্দর করে আকঁবেন। সেটি আপনার সামনে স্থাপন করবেন। সমস্ত কাজগুলো রাত্রি ১২ টার পর করবেন। এবার খুব সুন্দর করে যে কোনও দরুদ শরীফ ১০০ বার তেলাওয়াত করে উক্ত মন্ত্রটি এমন ভাবে পড়বেন যেন আপনি নিজ কানে শুনতে পান। আপনার মন্ত্র জপ অন্তত্য ৩ ঘন্টা পর্যন্ত চলবে এরপর আপনি সেই অবস্থায় মোমবাতি নিভিয়ে সেই আসনেই ঘুমিয়ে পড়বেন। এভাবে পর পর কয়েকদিন করলেই ( সাধারনত ৩-৭ দিন সময় লাগে) পরী এসে আপনার সামনে হাজির হবে। সে আসলে প্রথমেই আপনাকে তার নাম জানতে হবে তার পরীবার সর্ম্পকে বিস্তারিত জানবে। তার থাকার জন্য বাসস্থানের ব্যবস্থা করে রাখবে। কারন সে আপনার সাথে সর্ম্প্যে করলে তার জামায়াত বা তার পরীবারের কাছে ফিরে যেতে পারবে না। এ জন্য আপনাকে আপনার বাড়ীতে বা বাস্থানের এমন একটি স্থান নির্বাচন করতে হবে যেখানে দিনের বেলাতেও অন্ধকারচ্ছন্য থাকে, সুর্যের আলো পৌছায় না। এবার তাকে আহ্বানের নিয়মটি যেনে নিবেন, নিয়ে আপনি তাকে আপনার মনের খায়েস জানাতে পারেন, এতে সে খুশি হয়ে সেদিন হতেই বা পরবর্তী দিন হতেই আপনার মনের আকাঙ্খা পূর্ণ করতে তৎপর হবে। মনে রাখবেন লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু। তাকে আপনার নিজ স্বার্থে ব্যবহার করতে পারবেন সত্য কিন্তু তাকে কখনো নিজের চাকর বা দাসী ভাববেন না। এ বিষয় আরও বিস্তারিত আলোচনা এই চ্যাপ্টারের কোন অংশে করা হবে ইনশা আল্লাহ। ভালো থাকবেন।

মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৯

ব্ল্যাক ম্যাজিক রহস্য


ব্ল্যাক ম্যাজিক রহস্য
সভ্যতার আদি থেকেই জাদুবিদ্যা আর জাদুকর বিষয়ে মানুষের প্রচণ্ড রকম আগ্রহ। জাদুবিদ্যা মূলত অতীন্দ্রিয় আর প্রাকৃতিক শক্তিকে বশ করার বিদ্যা! ইংরেজি ‘ম্যাজিক’ শব্দের উদ্ভব হয়েছে ফারসি শব্দ মাজি থেকে! মাজিরা যে সব ক্রিয়া-কর্ম পালন করত, গ্রিকরা সেসবকে ম্যাজিক বলে অভিহিত করতেন! আর ম্যাজিকের সঙ্গে আত্মা বা ভূতের বিষয়টি চলে আসে অনিবার্যভাবে। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী ভূত হলো এমন এক জিনিস, যা মৃত ব্যক্তির আত্মা। আর তা জীবিত ব্যক্তির সামনে দৃশ্য আকার ধারণ বা অন্য কোনো উপায়ে আত্মপ্রকাশ করতে সক্ষম। ভৌতিক অভিজ্ঞতায় ভূতকে নানাভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। কখনো অদৃশ্য বা অস্বচ্ছ বায়বীয় আবার কখনোবা বাস্তবসম্মত সপ্রাণ মানুষ বা জীবের আকারে। আর এসব ভূত বা প্রেতাত্মার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে ভবিষ্যদ্বাণী বা কোনো কাজ করার বিদ্যাকে ব্ল্যাক ম্যাজিক, নেক্রোম্যান্সি বা কালো জাদু বলে। অন্যদিকে এক ধরনের বিশেষ ব্ল্যাক ম্যাজিক হচ্ছে ভুডু। ভুডুবিদ্যার সাহায্যে নাকি কবরের লাশ জ্যান্ত করে তাকে গোলামের মতো খাটানো যায়। অন্যদিকে শামানের কাজও মৃত মানুষের আত্মা নিয়ে। তবে ভুডুর সঙ্গে শামানদের পার্থক্য— এরা মন্দ আত্মার বিরুদ্ধে লড়াই করে। মন্দ আত্মাকে কাজে লাগায়। বিদেশি সিনেমায় এমনকি ভারতীয় সিরিয়ালে প্রায়ই দেখা যায়, একজন দুষ্ট ব্যক্তি একটি পুতুলের গায়ে সুচ ফুটিয়ে আরেক জায়গায় এক ব্যক্তিকে হত্যা করছে কিংবা অন্য কোনো উপায়ে ক্ষতি করার চেষ্টা করছে। বাংলায় একে ফুঁক দেওয়া, কবজ করা অথবা বাণ মারা বলে। এ ধরনের ঘটনা যারা ঘটায় তাদের ওঝা বলে। আর এ প্রক্রিয়াটিই বিশ্বব্যাপী ব্ল্যাক ম্যাজিক বা কালো জাদু নামে পরিচিত। খ্রিস্টধর্ম প্রবর্তনেরও আগের কথা। বহুকাল আগে পাশ্চাত্যে বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে নির্দিষ্ট কোনো ধর্মের প্রচলন ছিল না। তবে তাদের মধ্যে অদ্ভুত কিছু বিশ্বাস ও কর্মকাণ্ডের চর্চা ছিল। এরা এক একটি গোত্র বিভিন্ন কাল্পনিক ভূত-প্রেত বা অশুভ আত্মার আরাধনা করত। যা আফ্রিকান ব্ল্যাক ম্যাজিক বা কালো জাদু নামে পরিচিত। এমনকি এখনো এ বিদ্যার গোপন অনুসারীরা তাদের এ বিদ্যা দিয়ে মানুষের ক্ষতি করে আসছে। এ বিদ্যায় পারদর্শীদের ডাকি বা ওঝা বলে আর আফ্রিকান ভাষায় এদের বলে কিনডকি।
👺আত্মাসংক্রান্ত ধারণা থেকেই উদ্ভব
পৃথিবীতে ধর্মের আবির্ভাবের আগেও মানুষের মধ্যে আধ্যাত্মিক চর্চা ছিল। আবার ধর্মের আবির্ভাবের পরও এই চর্চা অব্যাহত ছিল। বহুকাল আগে পাশ্চাত্যের ধর্মহীন গোত্রের মধ্যে অদ্ভুত কিছু বিশ্বাস ও কর্মকাণ্ডের চর্চা ছিল। এরা এক একটি গোত্র বিভিন্ন কাল্পনিক ভূত-প্রেত বা অশুভ আত্মার আরাধনা করত। আর নিজেদের প্রয়োজনে এই আত্মাকে ব্যবহার করত। এই বিশ্বাসের চর্চা মূলত ছিল আফ্রিকানদের মধ্যে। আর তাই বিশ্বজুড়ে এটি আফ্রিকান ব্ল্যাক ম্যাজিক বা কালো জাদু নামে পরিচিত। এমনকি এখনো এ বিদ্যার গোপন অনুসারীরা তাদের এই চর্চা চালিয়ে যাচ্ছে।
মূলত প্রাক-শিক্ষিত সংস্কৃতির সর্বপ্রাণবাদ ও পূর্বপুরুষ পূজার মধ্যে ভূত বা আত্মাসংক্রান্ত ধ্যান-ধারণার প্রথম বিবরণ পাওয়া যায়। সে যুগে কিছু নির্দিষ্ট ধর্মীয় প্রথা, অন্ত্যেষ্টি সংস্কার, ভূত তাড়ানো অনুষ্ঠান ও জাদু অনুষ্ঠান আয়োজিত হতো। আর এসব আয়োজনের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল মৃত আত্মার সন্তুষ্টি আনয়ন। মূলত আত্মাসংক্রান্ত সেই ধ্যান-ধারণা থেকেই ব্ল্যাক ম্যাজিক বা কালো জাদুর বিবর্তন।

👹রোজাদের দাপুটে প্রথা
আদিম সমাজে ওইভাবে ধর্মের চর্চা না থাকলেও যেসব লোক আধ্যাত্মিক চর্চা করতেন, তাদের আলাদা দাপট ছিল। সাধারণ মানুষ এদের প্রচণ্ড রকম ভয়ের চোখে দেখতেন। আদিম সমাজের এমনই এক ধরনের মানুষ ছিল যাদের উইচ-ডক্টর বা রোজা নামে ডাকা হতো। এরা এমন ব্যক্তি ছিলেন যারা ব্ল্যাক ম্যাজিক জানতেন। অতীন্দ্রিয় শক্তির বলে প্রেতাত্মাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারতেন। আর প্রেতাত্মাদের দিয়ে সম্ভব-অসম্ভব যে কোনো কাজ করে ফেলতে পারতেন খুব সহজেই। সে কারণে ওই সময় রোজারা একাধারে চিকিৎসক, জাদুকর এবং পুরোহিতের ভূমিকা পালন করতেন। বর্তমানকালেও আদিম-সামাজিক ব্যবস্থায় বসবাসকারীদের মধ্যে উইচ-ডক্টর বা রোজাদের প্রভাব দেখা যায়। আদিম জাতিদের মধ্যে রোজাদের খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হতো।
রোজারা তাদের ডাকিনীবিদ্যা খাটিয়ে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিতে পারত। চোর বা হত্যাকারী ধরা ও শাস্তি প্রদানে রোজাদের অপরিহার্য ভূমিকা ছিল। এ ছাড়াও তারা জাদুবিদ্যার সাহায্যে রোগ নির্ণয় এবং এর প্রতিকার করতেন। তারা তাদের শিশুদের রোগাক্রান্ত করতে পারতেন এবং মানুষের মৃত্যুও ঘটাতে পারতেন। মানুষের মৃত্যু ঘটানোর জন্য তারা নানা ধরনের পদ্ধতি অবলম্বন করতেন। কখনো মানুষের একটি ছোট আকৃতির পুতুল তৈরি করে তাতে পিন বিদ্ধ করতেন। আবার কখনো কোনো লোকের চুল বা নখের টুকরো সংগ্রহ করে তা মাটিতে পুঁতে রাখতেন। এগুলো যখন আস্তে আস্তে শুকিয়ে যেত মানুষটিও ক্রমেই মৃত্যুমুখে পতিত হতো। রোজারা প্রায়ই রোগের চিকিৎসার জন্য গাছ-গাছড়া, লতাপাতা ব্যবহার এবং রোগের সংক্রমণ দূর করার জন্য জল ব্যবহার করত। কখনো তারা জাদুকরী পাথরসহ জল ছিটিয়ে দিত।
তারা জাদুকরী গান, প্রার্থনা এবং আশ্চর্য ভঙ্গিমায় নৃত্য করত। এর উদ্দেশ্য ছিল সাধারণ মানুষের মনকে প্রভাবিত করা। রোজারা সব সময় রঙিন পোশাক পরত, মুখোশ ধারণ এবং মুখমণ্ডল চিত্রিত করত। কেউ কেউ পশুর চামড়াও পরিধান করত। বস্তুত মানুষকে সম্মোহিত করত। আর লোকজন বিশ্বাস করতে বাধ্য হতো যে তাদের সৌভাগ্যের জন্য রোজারাই দায়ী।
👺 ভুডু বনাম শামান
ভুডু (Voodoo) হচ্ছে এক ধরনের ব্ল্যাক ম্যাজিক বা ডাকিনীবিদ্যা। শোনা যায়, ভুডুবিদ্যার সাহায্যে নাকি কবরের লাশ জ্যান্ত করে তাকে গোলামের মতো খাটানো যায়। শামানের কাজও মৃত মানুষের আত্মা নিয়ে। তবে ভুডুর সঙ্গে শামানদের পার্থক্য হলো— এরা মন্দ আত্মার বিরুদ্ধে লড়াই করে। মন্দ আত্মাকে কাজে লাগায়। ভুডু এক ধরনের অপবিদ্যা। যারা ভুডুবিদ্যা জানে, তারা নাকি ইচ্ছা করলেই যাকে খুশি তার ক্ষতি করতে পারে। তাই এ বিদ্যায় পারদর্শীদের অনেকেই এড়িয়ে চলেন।
তবে শামান সব সময় ন্যায়ের পক্ষে কাজ করে। শামানকে কেউ বলে জাদুকর, কেউ কবিরাজ। শামান কথাটি এসেছে সাইবেরিয়ার তুঙ্গুস ভাষী মেষ পালকদের কাছ থেকে। অষ্টাদশ শতাব্দীর ভ্রমণকারীরা প্রথম শামানদের ব্যাপারে বিশ্ববাসীকে অবহিত করে। জানা যায়, শামানরা এমন ধরনের মানুষ যাদের রয়েছে অবিশ্বাস্য শক্তি। মৃত ব্যক্তির আত্মার কাছ থেকে জ্ঞান সংগ্রহ করে তারা। ইচ্ছা করলেই নাকি নশ্বর দেহ ত্যাগ করে স্বর্গ বা নরকে স্বচ্ছন্দে প্রবেশ করতে পারে। শামানদের প্রধান বাসস্থান এক সময় সাইবেরিয়া হলেও সোভিয়েতদের অত্যাচারে তারা দেশ ত্যাগে বাধ্য হয়। তারা ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বের নানা জায়গায়। শামান বর্তমানে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে উত্তর আমেরিকা এবং পশ্চিম ইউরোপের শহরাঞ্চলেও। শামানরা তাদের নানা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড প্রদর্শনের জন্য ভ্রমণ করছে চিলির সান্তিয়াগো থেকে শুরু করে কোরিয়ার সিউল পর্যন্ত। যদিও অনেক দেশের সরকার শামানিক চর্চাকে অবৈধ এবং বিপজ্জনক বলে বর্ণনা করেছে। কিন্তু রোমান্টিক মানুষের কাছে শামান হলো ধর্মীয় অভিজ্ঞতা লাভের গাইড। আর জাতীয়তাবাদীরা শামানকে মনে করে প্রাচীন সাংস্কৃতিক জ্ঞানের বাহক।
👺শামানদের ইতিবৃত্ত
শামানদের মতে, আমাদের চারপাশে যত উপাদান রয়েছে সব কিছুর মাঝে আছে আত্মার অস্তিত্ব। ‘ভুডু’ কথার অর্থও ‘আত্মা’। এই শব্দটির উৎপত্তি ফন জাতির কাছ থেকে। এরা ইউয়ি সম্প্রদায়ের আত্মীয়। ভুডু চর্চার উৎপত্তি হাইতিতে। তবে আফ্রিকায় এর চর্চা ব্যাপক। ব্রাজিল, জ্যামাইকাতেও কিন্তু কম ভুডু চর্চা হয় না। তবে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নাম। যেমন, হাইতিতে বলা হয় ভুডু, ব্রাজিলে ক্যানডোমবল, জ্যামাইকাতে ওবিয়াহ ইত্যাদি। পশ্চিম আফ্রিকার মানুষ সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস করে ভুডুতে সেখানকার কমপক্ষে ২৫ লাখ মানুষ এ বিদ্যার অনুরাগী। এ চর্চা সবচেয়ে বেশি হয় আফ্রিকার ঘানায়। ঘানার ককুজানের অধিবাসীরা এ বিদ্যাটির সাংঘাতিক অনুরাগী। এরা অসুখ-বিসুখে সরকারি হাসপাতালের ডাক্তারদের কাছে যাওয়ার চেয়ে ভুডু চিকিৎসকদের ওপর অনেক বেশি ভরসা করে।
শামানরাও তাই। আত্মার ওপর এদের বিশ্বাস গভীর। এদের ধারণা, আত্মা তাদের সব বিপদ থেকে রক্ষা করবে। বংশপরম্পরায় এ বিশ্বাস চলে আসছে তাদের মাঝে। আফ্রিকায় যারা ভুডু চর্চা করে তারাও কিন্তু বংশানুক্রমে এ কাজ করে আসছে। আফ্রিকান বাবা-মা তাদের সন্তানদের এ বিদ্যা চর্চায় উৎসাহ জোগায়। প্রতিদিনই সকালে পূজারিরা স্থানীয় দেবতাদের উদ্দেশে নৈর্বেদ্য অর্পণ করে তারপর নিজের কাজে বের হয়। শামানরা শুধু বিশ্বাস করে আত্মায়। তাদের কোনো দেবতা নেই। তবে ভুডু শুধু বিশ্বাস করে আত্মায়। তাদের কোনো দেবতা নেই। তবে ভুডু অনুসারীদের বিভিন্ন দেবতা আছে। যেমন ফ্লিমানি কোকু হলো রোগ মুক্তির দেবতা, হেভিও সো হলো, বিদ্যুৎ এবং ব্রজের দেবতা, মেমি ওয়াটা ধন-সম্পদের দেবী ইত্যাদি। দেবতার ওপর তাদের এত বিশ্বাস যে, তারা মনে করে আগুন তাদের ক্ষতি করতে পারে না। ছুরি দিয়ে পেট কাটলেও তারা ব্যথা পায় না। তারা বলে, দেবতারা তাদের সব বিপদ থেকে রক্ষা করে।
শামানরাও বলে আত্মা তাদের সব রোগ মুক্তির পথ বাতলে দেয়। যারা এ সংস্কৃতিতে বিশ্বাসী, তারা বলে শামানদের রয়েছে অলৌকিক ক্ষমতা। এরা আত্মার শক্তিতে বলীয়ান হয়ে স্বাস্থ্য, খাদ্য, উর্বরতা বিষয়ক সব সমস্যারও সমাধান করে দিতে পারে। শামানদের ব্যাপ্তি সাইবেরিয়া থেকে ল্যাপল্যান্ড, বিব্বত, মঙ্গোলিয়া, উত্তর এবং দক্ষিণ আমেরিকা (বিশেষ করে আমাজন এলাকায়) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, এমনকি ভারতেও বিস্তৃত। পূর্ব ভারতে সোরা নামে এক উপজাতি আছে, জঙ্গলে বাস করে। এরাও শামান সংস্কৃতিতে বিশ্বাসী। সোরা উপজাতির লোকেরা মৃতের সঙ্গে কথা বলে। এখানে শামানের ভূমিকা সাধারণত পালন করে মহিলারা। তারা দুই ভুবন অর্থাৎ পৃথিবী ও স্বর্গের মাঝে সমন্বয় সাধন করে বলে শামান অনুসারীদের বিশ্বাস। মহিলা শামানকে কবর দেওয়া হয়। এরপর তার আত্মা চলে যায় অন্য ভুবনে। সেখানে মৃত ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে সে। লোকে মহিলাকে কথা বলতে দেখে। সোরাদের মতে, মৃত্যু মানে কারও অস্তিত্বের ধ্বংস নয়। মৃত্যু তাদের কাছে নতুন আরেক জীবন মাত্র। মৃত্যুর পরেও আত্মা যথেষ্ট শক্তিশালী থাকে, তাদের আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলে— এমনটিই বিশ্বাস সোরা উপজাতির।
👺শয়তানের প্রতীক
ব্ল্যাক ম্যাজিকের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো প্রতীক ও সংকেতচিহ্নের ব্যবহার। অনিষ্টকারী শয়তানের প্রতীককে ব্ল্যাক ম্যাজিশিয়ানরা কাজে লাগিয়ে এসেছেন যুগ যুগ ধরে। শয়তানের প্রতীক হিসেবে বিভিন্ন সভ্যতার মানুষের বিশ্বাস ছিল সেটি হচ্ছে— শিং। ব্ল্যাক ম্যাজিক চর্চায় শিং তাই অপরিহার্য। এক সময়ের বিখ্যাত জাদুকর ছিলেন জোহান রোসা। তার একটা মন্ত্রপুত আংটি ছিল। যেটায় একটা প্রেতাত্মাকে তিনি আটকে রেখে ছিলেন আর এটাকে দিয়ে সব কাজ করাতেন। তার মৃত্যুর পরে প্রকাশ্য জনসভায় আংটিটা হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে ভেঙে ফেলা হয়েছিল। গর্ভবতী নারীদের প্রসব বন্ধ করা থেকে শুরু করে যৌনাকাঙ্ক্ষা চিরতার্থ করার মতো বীভৎস সব জাদু বিধানের চর্চা হতো তখন। এ সময়ে বিশ্বাস করা হতো বশীকরণের মাধ্যমে মানুষকে দাস বানিয়ে রাখা যায়। যে কোনো বিপজ্জনক কাজে যাওয়ার আগে ‘প্রয়োজনীয় মন্ত্রপুত জামা’ পরে যাওয়ার রীতি ছিল, কুমারী মেয়ের বড় দিনের এক সপ্তাহ ধরে এই ধরনের জামা ঘরে বুনত। ‘বান’ ছেঁড়ার কথা বাংলাদেশে অপরিচিত নয়, মধ্যযুগের এই (Magical Arrow) ধারণাটার ব্যাপক প্রচার ছিল। বিশ্বাস করা হতো এভাবে মানুষের ক্ষতি করা সম্ভব! মধ্যযুগে রেনেসাঁর আলো যতই ছড়াক না কেন, ব্ল্যাক ম্যাজিশিয়ানদের হাত থেকে কেউই রক্ষা পায়নি।
👺জাদুবিদ্যার নানান প্রকার
জাদুবিদ্যার প্রচলন সব সময়ই কৌতূহলজনক। সেজন্য বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সমাজবিদ- নৃতাত্ত্বিকরা সমাজে প্রচলিত জাদু বিধানগুলো পর্যালোচনা করে এর শ্রেণি বিভাগ করার চেষ্টা করেছেন। যেমন স্যার জেমস জর্জ ফ্রেজারের মতে জাদুবিদ্যার বিধানগুলো প্রধানত দুই রকমের হোমিওপ্যাথিক এবং কনটেজিয়াস ম্যাজিক।
হোমিওপ্যাথিক ম্যাজিক সব সময়ই শত্রু ধ্বংসের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়। এক্ষেত্রে শত্রুর প্রতিমূর্তি [মোম, মাটি, কাঠ, কাপড়] বা ছবি ইত্যাদি তৈরি করে পুড়িয়ে বা ছুরি দিয়ে কেটে ধ্বংস করা হয়। ধারণা এই যে, মূর্তিটা যে যন্ত্রণা পাচ্ছে, শত্রুও তেমন যন্ত্রণা বা আঘাত পাচ্ছে। এটাকে ব্ল্যাক ম্যাজিক বলে। তবে এই জাদু আবার অনেক সময় মানুষের উপকার বা ভালোর জন্যও ব্যবহার করা হয়। যেমন ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপে এমন একটা জাদু বিধান আছে, কোনো নারীর সন্তান হচ্ছে না, তখন একটা কাঠের ছোট শিশু বানিয়ে নিঃসন্তান রমণীটির কোলে বসিয়ে আদর করে। এর ফলে তার সন্তান হবে এমন ভাবা হয়। কখনো কখনো রোগের চিকিৎসার জন্যও এই ধরনের জাদুর প্রয়োগ দেখা যায়। অন্যদিকে কনটেজিয়াস ম্যাজিক হচ্ছে মানুষের শরীরের বিভিন্ন অংশ বিশেষ যেমন চুল, নখ, থুথু বা পরিধেয় বস্ত্রের মাধ্যমে জাদু করে মানুষের ক্ষতি বা উপকার করা। এক্ষেত্রে শত্রুর আঙ্গুলের নখ, চুল, ভ্রু, থুথু -এসব সংগ্রহ করে মোমের সাহায্যে শত্রুর একটা অবিকল প্রতিরূপ তৈরি করা হয়। প্রতিমূর্তিটি ছয় দিন ধরে মোমের তাপে ঝলসাতে হবে এবং সাত দিনের দিন মূর্তিটি পুড়িয়ে ফেললে শত্রুর মৃত্যু হবে! জাদুবিদ্যার ধরন আর প্রকারভেদ নিয়ে অনেকে অনেক মত দিয়েছেন, তাদের সব মতবাদ একসঙ্গে করলে বলা যায় জাদুবিদ্যা প্রধানত তিন ধরনের। প্রথমত, সৃজনধর্মী জাদু বা হোয়াইট ম্যাজিক। ফসলের ভালো উৎপাদন, বৃষ্টি নামানো, গাছে ভালো ফল হওয়া প্রেম বা বিয়ে ইত্যাদির উদ্দেশ্যে এ জাদু ব্যবহৃত হয়। দ্বিতীয়ত প্রতিরোধক জাদু। এই জাদুকেও হোয়াইট ম্যাজিকের মধ্যেই ফেলা যায়। এটা বিপদ-আপদ এড়ানো, রোগব্যাধি দূর করা আর কালো জাদুর প্রভাব এড়ানোর কাজে ব্যবহার করা হয়। আর সর্বশেষ প্রকারটিই হচ্ছে ব্ল্যাক ম্যাজিক বা ধ্বংসাত্মক ম্যাজিক। এটি রোগব্যাধি সৃষ্টি, সম্পত্তি ধ্বংস, জীবন নাশের কাজে ব্যবহার করা হয়। ডাইনিবিদ্যায় এর প্রয়োগ বেশি দেখা যায়। সেই প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে আজ পর্যন্ত এর প্রভাব দেখা যায় রাজনীতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতির ওপর। জাদুবিদ্যার প্রাচীন ইতিহাস যদি আমরা খুঁজে দেখতে চাই তাহলে আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে সেই প্যালিওলিথিক যুগের গুহামানবদের গুহাচিত্রের দিকে। অরিগেনেসিয়া নামক গুহায় বেশ কিছু মুখোশ পরা মানুষ আর জন্তু জানোয়ারের ছবি দেখা যায়, যেখানে মানুষগুলোর হাতের আঙ্গুলের প্রথম গিঁট পর্যন্ত কাটা! যদিও নৃতাত্ত্বিকেরা এদের কুষ্ঠরোগাক্রান্ত মানুষ বলে বর্ণনা করেছেন। তবে জাদুবিদ্যা বিশারদদের মতে মৃত্যুকে জয় করার জন্যই হাতের আঙ্গুল কেটে তা নিবেদন করার রীতি সে আমলে প্রচলিত ছিল। দেহের অংশ বিশেষ দিয়ে গুণ [ব্ল্যাক ম্যাজিক] করার রীতি এদেশেও দেখা যায়। প্রাচীন ধর্মগ্রন্থগুলোতেও নানা আঙ্গিকের জাদুবিদ্যা চর্চার প্রমাণ পাওয়া যায়। সমসাময়িক ধর্মগুরু আর জনগণের মধ্যে। জাদুবিদ্যার এই চর্চা কখনই থেমে থাকেনি। গোপনে একদল ব্ল্যাক ম্যাজিকের চর্চা করে যাচ্ছে।
👺নানান দেশে প্রাচীনকাল থেকেই...
ব্ল্যাক ম্যাজিকের চর্চা হয়ে আসছে বহুকাল আগে থেকেই। কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠী বা সভ্যতার লোক নয় ইতিহাস বলে বিভিন্ন সভ্যতায় বিভিন্ন গোষ্ঠীর মানুষের একটি অংশ কালো জাদুর চর্চা করে আসছে। কালো জাদু তাই কোনো দেশ কাল পাত্রে সীমাবদ্ধ নয়। ইহুদিরা মিসরে বন্দী অবস্থায় অবস্থানের সময়েই মিসরীয় জাদুবিদ্যার দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল। অবশ্য তাদের নিজেদেরও আলাদা বৈশিষ্ট্যময় জাদু বিশ্বাস ছিল। ইহুদি জাদুকরেরা বাষ্পস্নানের মাধ্যমে বলি আর উপহার দিয়ে অতিপ্রাকৃত শক্তিকে বশ করার চেষ্টা করত। এদের জাদু চর্চায় স্থূল যৌনাচার হতো। এ ছাড়া অল্পবয়স্ক বালকদের ব্যবহার করত অতীন্দ্রিয় শক্তির সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে। কালো জাদুর ইতিহাস বলে, ব্ল্যাক ম্যাজিকে বিশেষ দক্ষ ব্যক্তিদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ছিলেন কিং সলোমন। তার ‘দ্য কি অব সলোমানদ’ বইটি পরবর্তীকালে জাদুবিদ্যার সর্বশ্রেষ্ঠ বই হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে।
ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীন ধর্মগ্রন্থগুলোতেও জাদুবিদ্যা আর ধর্মের একটা জটিল সংমিশ্রণ দেখা যায়। এখনকার সমাজেও এমন অনেক বৈদিক জাদুবিদ্যাগত প্রক্রিয়া এখনো চালু আছে। হরপ্পা মহেঞ্জোদারতে উত্খননে প্রাপ্ত রিং স্টোনগুলো জাদুবিদ্যায় ব্যবহার করা হতো বলে জন মার্শাল ধারণা করেন। এ ছাড়া জাপানের প্রাচীন শিন্টো ধর্মের মধ্যে জাদুবিদ্যা চর্চার কথা জানা যায়। জাপানিরা বিশ্বাস করে, চালের মধ্যে ব্ল্যাক ম্যাজিক প্রতিহত করার বিশেষ শক্তি আছে। এ ছাড়া রাস্তার সঙ্গমস্থলও তাদের কাছে বিশেষভাবে পবিত্র। এসব স্থানে তারা এখনো জননেন্দ্রিয়র প্রতীক চিহ্ন স্থাপন করে, বিশ্বাস করে এই প্রতীক অশুভ শক্তিকে দূরে সরিয়ে রাখবে! জাপানিদের মতো চীনাদেরও ভূতপ্রেত সম্পর্কে বেশ ভালোই ভয়ভীতি ছিল। মজার ব্যাপার হলো, চীনের ঘরবাড়ি ও পুল নির্মাণে একটা বিশেষ দেবতা চীনাদের প্রভাবিত করেছে। এই দেবতার নাম হলো শা। শা হলো একটা অপদেবতা। আর চীনারা বিশ্বাস করে এই অপদেবতা সব সময়ে সোজা রেখা বরাবর চলে। তাই এটাকে প্রতিহত ছাদে আঁকা হতো বক্রতা আর কোণ! গ্রিকদের জাদুবিদ্যার জন্য বিশেষ বর্ণমালার সৃষ্টি করেছিল। এগুলো লেখা হতো পবিত্র কালি দিয়ে। আর লেখার সময় বার বার পাঠ করা হতো।
👺ছোট্ট শিশুর দেহে ৫০ সুই
প্রাচীনকালে কালো জাদুর বহু ব্যবহারের কথা শোনা গেলেও এখন ততটা বড় আকারে জাদুচর্চা করার কথা শোনা যায় না। তবে একেবারেই থেমে নেই কালো জাদু। সাম্প্রতিককালেরএমন দুটি ঘটনা মিডিয়ায় আলোড়ন তুলেছে। ব্ল্যাক ম্যাজিকের শিকার হয়ে সরাসরি হাসপাতালে ভর্তি হয় মাত্র দুই বছর বয়সী এক শিশু। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাকে দ্রুত চিকিৎসা দিতে গিয়ে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলেন চিকিৎসক। কারণ এ-ক্সরে রিপোর্টে শিশুটির শরীরের ভিতরের বিভিন্ন অংশে পাওয়া গেল ৫০টির মতো সুই। সুইগুলো দেখেই ব্ল্যাক ম্যাজিকের কথা মনে পড়ে গেল। ৫০টি সুইয়ের মাঝে ১৭টি ছিল বাচ্চা ছেলেটির পরিপাকতন্ত্রের ভিতরে। এই ঘটনা ছড়িয়ে পড়ল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ঘটনার তদন্তের জন্য পুলিশ ডাকা হলো। পুলিশও প্রাথমিক মন্তব্য করল, কেউ একজন ব্ল্যাক ম্যাজিক বা কালো জাদুর অংশ হিসেবে ছেলেটির দেহে সুই ঢুকিয়ে দিয়েছে। প্রথম সুইটি পাওয়া গেল শিশুটির বাম ফুসফুসের ভিতরে। এক্স-রে করার পর দেখা গেল শিশুটির পেট, গলা, ঘাড় ও পায়ে মোট ৫০টির মতো সুই ঢুকানো হয়েছে। এরপর আর বুঝতে বাকি থাকে না শিশুটি ভয়াবহ ব্ল্যাক ম্যাজিকের শিকার হয়েছে। শিশুটিকে তার এক আত্মীয় হাসপাতালে নিয়ে আসে কিন্তু নিরাপত্তার স্বার্থে তার নাম প্রকাশ করেনি বিখ্যাত ডেইলি মেইল। ছেলেটির মায়ের নাম মারমা সুজা স্যান্তস। তিনি পুলিশকে জানান, যখন তিনি কর্মস্থলে যেতেন তখন শিশুটিকে দেখাশোনা করতেন শিশুটির দাদিমা। কিন্তু কেউ নিশ্চিত নন, শিশুটির দেহে কে সুই ঢুকিয়েছেন। ধারণা করা হয় তার সৎ বাবা এই কাজটি করে থাকতে পারেন কারণ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি ব্ল্যাক ম্যাজিক অনুশীলন করতেন। অভিযুক্ত অভিযোগ অস্বীকার করলেও এ নিয়ে বিস্তারিত তদন্ত চলছে।
👹 যেকোনো প্রশ্ন ও পরামর্শে যোগাযোগ নাম্বার : IMO, 01757786808

সর্বজন ‌বশীকরন ‌গুটিকা

সর্বজন ‌বশীকরন ‌গুটিকা
সর্বজন বশীকরণ গুটিকা
আপনি কি কোন কোম্পানির মালিক, কোন এলাকার চেয়ারম্যান কিংবা কোন এলাকার এম.পি অথবা হতে চান এক সমাজ সেবক।
যেকোন ধরনের সমাজের পরিচিত ব্যক্তি হতে হলে আপনাকে অবশ্যই জনবল দরকার পড়বে। কিংবা একজন অফিসের মালিক হলেও কিন্তু আপনাকে কয়েক হাজার শ্রমিক দিয়ে কাজ করাতে হবে। তবে আপনি কি পারবেন এত গুলো লোককে সঠিক ভাবে চালিয়ে নিতে। তাদের কি সবার মন যোগাতে পারবেন? অবশ্যই না। কারন আপনি এক জন মানুষ তাই কিভাবে এতগুলো মানুষের মন জয় করতে পারেন আপনি। অবশ্যই তা করতে আপনি ব্যর্থ হবেন। তেমনি একজন সমাজ সেবক কিন্তু সবার কাছে প্রিয় ব্যক্তি হতে পারেন না। কারন মানুষ হলো খাদ্য ভোজী প্রাণী। তাই তারা যেখানে খাবার বেশি পায় ঠিক সেখানেই তারা শ্লোগান দিয়ে থাকেন। তাই তখন আপনার কথা ভুলে যায়। আপনি নির্বাচনের সময় দেখবেন আপনার সাথে পিছনে রয়েছে কয়েক হাজার জনগন তাদের কে দিয়ে আপনি আপনার প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। চারিদিক থেকে অনেক সাড়া পাচ্ছেন। মনে হয় আপনি নির্বাচনে জয়ী হবেন। কিন্তু এই ধারণা আপনার সবচেয়ে বড় ভুল। কারণ আপনি দেখবেন নির্বাচনের পূর্বে কয়েক হাজার লোক আপনার ভোটার কিন্তু ফলাফলের বেলায় দেখবেন যে আপনার বাক্সে এক হাজার ও ভোট পড়েনি। আপনার পাশে থাকা ব্যক্তিই অন্যের দিকে হেলে পড়েছিল নির্বাচনের আগের রাতে। তাই অাপনার এই ফলাফল। কিভাবে আপনি আপনার জনবলকে বশ করে রাখবেন। এ বিষয় নিয়ে আমাদের আজকের আলোচনা। নিম্নলিখিত বিষয়টি নির্বাচনের কয়েক মাস পূর্বে প্রয়োগ করলে আপনি উপরওয়ালার দয়ায় নির্বাচনে জয়ী হতে সক্ষম হবেন। কেউ আপনাকে ঠেকাতে পারবেনা। আর অফিসের মালিকের ক্ষেত্রে সবসময় প্রয়োগ করা যাবে।মন্ত্র-“ওঁ নমোঃ ভগবতে উড্ডামহেশ্বরায় মোহয় মোহয় মিলি মিলি ঠঃ ঠঃ স্বাহা।”
শুদ্ধস্থানে শুদ্ধবস্ত্রে বসে ধুপ-দ্বীপ জ্বালীয়ে প্রথমে উক্ত মন্ত্রটি ৩০০০০ (ত্রিশ হাজার) বার জপ করে সিদ্ধ করে নিতে হবে। তারপর প্রয়োগ করতে হবে।
প্রয়োগ বিধিঃ- শ্বেত-শরিষা, দেবদারু গাছের মুল একত্রে পেষণ করে বটিকা প্রস্তুত করতে হবে। পরে এই বটিকা মুখে রেখে, যার সঙ্গে কথাবার্তা বলবে, সেই বশীভুত হবে।
বিঃদ্রঃ- নির্বাচনে সকল ভোটার বশীভূত করে ভোট পাওয়ার বিশেষ একটি তদবীর আমরা প্রদান করতেছি, আপনারা যাহারা এই তদবীরটি গ্রহণ করতে ইচ্ছুক শুধু তারাই আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।  বিদেশ ‌থেকে ‌ইমু 01757786808/ বাংলাদেদ থেকে 01978142102/

শনিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৯

নারী ‌বশীকরণ ‌‌টোটকা

নারী বশিকরন টোটকা :

বশিকরণ টোটকা সবচাইতে সহজ এবং দ্রুত ফল দান কারী যেমন কোন মন্ত্র বা তন্ত্র প্রয়োগ করলে যেমন ৭ দিনের সাধনা করলে প্রায় ৪৯ দিন লেগে যায় কিন্তু টোটকাতে প্রায় সাতে সাতে সব্বর্চ ১৪ দিন লাগতে পারে। তাই এতে সমস্য এবং সময় দুটোই কম কিন্তু একটা জিনিস খেয়াল রাখতে হয় তা হলো সঠিক দিন এবং সঠিক পয়ান।

নিচে দুটো বহুল পরিক্ষিত টোটকা দেওয়া হলো ব্যবহার করুন-

যে স্ত্রীকে বশ করতে চান তার ঋতু কালিন ব্যবহৃত কাপরের একটি টুকরো সাধরনত গ্রামের মেয়েরা এক কাপর কয়েকদিন/কয়েক বার ব্যবহার করে এটা খুজে বের করার দায়িত্ব আপনাদের তবে আমি এটুকু বলবো মেয়ের ঋতুকালীন কাপর খুজতে গিয়ে আবার মেয়ের মায়ের কাপর নিয়ে আসবেন না। এবার সেই কাপরের কিঞ্চিৎ কেটে নিয়ে তাতে রেডির তৈল মাখিয়ে আগুনে জ্বালাবেন এবং সেটাকে কাজল বানাবেন এবার সেই কাজল চোখে দিয়ে সেই মেয়ের সাথে দেখা করবেন। এবার দেখেন সেই মেয়ে আপনাকে কি বলে, সে অবশ্যই আপনাকে মনে করবে না যে আপনি তার বাপ চাচা বা অন্য কেউ !

আবার অশ্বনী নক্ষত্রে পলাশ গাছের শিকর হাতে নিয়ে সেই দিন যদি আপনার কাঙ্খিত মেয়ের সাথে দেখা করেন তবে সেই মেয়ে আপনাকে দেখা মাত্র বিচলিত হবে এতে বিন্দু মাত্র সন্দেহ নাই । তবে পলাশ গাছ খুজে পাওয়া টা কঠিন । তবে আপনি কিছু কিছু গাছ নিজ প্রয়োজনে আপনার বসত বাড়ীর চারপাশে লাগাতে পারেন এতে আপনার প্রেমিক হৃদয়ের স্বারাদিতে যেমন কাজে লাগবে প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করতেও কাজে লাগবে এবং ঔষধি গাছ হিসাবে তো লাগবেই।। তাই গাছটি আজই খুজে বের করুন।.. তান্তিক গুরু আজিজ রহমান।
তন্ত মন্ত কালো যাদু টোটকা তাবিজ ও
জ্বিন চালানের মাধমে তদবির করা হয়
যে কোন কাজ ৩/৫দিনে ১০০%গ্যারান্টিতে করা হয়। কথায় নয় কাজে পমান।
আপনারা যে কোন দেশ বা জেলা থকে অনলাইনের মাধমে তদবির করতে পারেন।
সরা সরি ঠিকানা। খুলনা। খারিস পুর বাজার রোড ২৫/৩..যে কোন সমসায় ইনবক্সে যোগা যোগ করুন বা কল করুন 01757786808

বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৯

কালো ‌জাদুর ‌রহস

ব্ল্যাক ম্যাজিক রহস্য
সভ্যতার আদি থেকেই জাদুবিদ্যা আর জাদুকর বিষয়ে মানুষের প্রচণ্ড রকম আগ্রহ। জাদুবিদ্যা মূলত অতীন্দ্রিয় আর প্রাকৃতিক শক্তিকে বশ করার বিদ্যা! ইংরেজি ‘ম্যাজিক’ শব্দের উদ্ভব হয়েছে ফারসি শব্দ মাজি থেকে! মাজিরা যে সব ক্রিয়া-কর্ম পালন করত, গ্রিকরা সেসবকে ম্যাজিক বলে অভিহিত করতেন! আর ম্যাজিকের সঙ্গে আত্মা বা ভূতের বিষয়টি চলে আসে অনিবার্যভাবে। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী ভূত হলো এমন এক জিনিস, যা মৃত ব্যক্তির আত্মা। আর তা জীবিত ব্যক্তির সামনে দৃশ্য আকার ধারণ বা অন্য কোনো উপায়ে আত্মপ্রকাশ করতে সক্ষম। ভৌতিক অভিজ্ঞতায় ভূতকে নানাভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। কখনো অদৃশ্য বা অস্বচ্ছ বায়বীয় আবার কখনোবা বাস্তবসম্মত সপ্রাণ মানুষ বা জীবের আকারে। আর এসব ভূত বা প্রেতাত্মার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে ভবিষ্যদ্বাণী বা কোনো কাজ করার বিদ্যাকে ব্ল্যাক ম্যাজিক, নেক্রোম্যান্সি বা কালো জাদু বলে। অন্যদিকে এক ধরনের বিশেষ ব্ল্যাক ম্যাজিক হচ্ছে ভুডু। ভুডুবিদ্যার সাহায্যে নাকি কবরের লাশ জ্যান্ত করে তাকে গোলামের মতো খাটানো যায়। অন্যদিকে শামানের কাজও মৃত মানুষের আত্মা নিয়ে। তবে ভুডুর সঙ্গে শামানদের পার্থক্য— এরা মন্দ আত্মার বিরুদ্ধে লড়াই করে। মন্দ আত্মাকে কাজে লাগায়। বিদেশি সিনেমায় এমনকি ভারতীয় সিরিয়ালে প্রায়ই দেখা যায়, একজন দুষ্ট ব্যক্তি একটি পুতুলের গায়ে সুচ ফুটিয়ে আরেক জায়গায় এক ব্যক্তিকে হত্যা করছে কিংবা অন্য কোনো উপায়ে ক্ষতি করার চেষ্টা করছে। বাংলায় একে ফুঁক দেওয়া, কবজ করা অথবা বাণ মারা বলে। এ ধরনের ঘটনা যারা ঘটায় তাদের ওঝা বলে। আর এ প্রক্রিয়াটিই বিশ্বব্যাপী ব্ল্যাক ম্যাজিক বা কালো জাদু নামে পরিচিত। খ্রিস্টধর্ম প্রবর্তনেরও আগের কথা। বহুকাল আগে পাশ্চাত্যে বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে নির্দিষ্ট কোনো ধর্মের প্রচলন ছিল না। তবে তাদের মধ্যে অদ্ভুত কিছু বিশ্বাস ও কর্মকাণ্ডের চর্চা ছিল। এরা এক একটি গোত্র বিভিন্ন কাল্পনিক ভূত-প্রেত বা অশুভ আত্মার আরাধনা করত। যা আফ্রিকান ব্ল্যাক ম্যাজিক বা কালো জাদু নামে পরিচিত। এমনকি এখনো এ বিদ্যার গোপন অনুসারীরা তাদের এ বিদ্যা দিয়ে মানুষের ক্ষতি করে আসছে। এ বিদ্যায় পারদর্শীদের ডাকি বা ওঝা বলে আর আফ্রিকান ভাষায় এদের বলে কিনডকি।
👺আত্মাসংক্রান্ত ধারণা থেকেই উদ্ভব
পৃথিবীতে ধর্মের আবির্ভাবের আগেও মানুষের মধ্যে আধ্যাত্মিক চর্চা ছিল। আবার ধর্মের আবির্ভাবের পরও এই চর্চা অব্যাহত ছিল। বহুকাল আগে পাশ্চাত্যের ধর্মহীন গোত্রের মধ্যে অদ্ভুত কিছু বিশ্বাস ও কর্মকাণ্ডের চর্চা ছিল। এরা এক একটি গোত্র বিভিন্ন কাল্পনিক ভূত-প্রেত বা অশুভ আত্মার আরাধনা করত। আর নিজেদের প্রয়োজনে এই আত্মাকে ব্যবহার করত। এই বিশ্বাসের চর্চা মূলত ছিল আফ্রিকানদের মধ্যে। আর তাই বিশ্বজুড়ে এটি আফ্রিকান ব্ল্যাক ম্যাজিক বা কালো জাদু নামে পরিচিত। এমনকি এখনো এ বিদ্যার গোপন অনুসারীরা তাদের এই চর্চা চালিয়ে যাচ্ছে।
মূলত প্রাক-শিক্ষিত সংস্কৃতির সর্বপ্রাণবাদ ও পূর্বপুরুষ পূজার মধ্যে ভূত বা আত্মাসংক্রান্ত ধ্যান-ধারণার প্রথম বিবরণ পাওয়া যায়। সে যুগে কিছু নির্দিষ্ট ধর্মীয় প্রথা, অন্ত্যেষ্টি সংস্কার, ভূত তাড়ানো অনুষ্ঠান ও জাদু অনুষ্ঠান আয়োজিত হতো। আর এসব আয়োজনের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল মৃত আত্মার সন্তুষ্টি আনয়ন। মূলত আত্মাসংক্রান্ত সেই ধ্যান-ধারণা থেকেই ব্ল্যাক ম্যাজিক বা কালো জাদুর বিবর্তন।

👹রোজাদের দাপুটে প্রথা
আদিম সমাজে ওইভাবে ধর্মের চর্চা না থাকলেও যেসব লোক আধ্যাত্মিক চর্চা করতেন, তাদের আলাদা দাপট ছিল। সাধারণ মানুষ এদের প্রচণ্ড রকম ভয়ের চোখে দেখতেন। আদিম সমাজের এমনই এক ধরনের মানুষ ছিল যাদের উইচ-ডক্টর বা রোজা নামে ডাকা হতো। এরা এমন ব্যক্তি ছিলেন যারা ব্ল্যাক ম্যাজিক জানতেন। অতীন্দ্রিয় শক্তির বলে প্রেতাত্মাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারতেন। আর প্রেতাত্মাদের দিয়ে সম্ভব-অসম্ভব যে কোনো কাজ করে ফেলতে পারতেন খুব সহজেই। সে কারণে ওই সময় রোজারা একাধারে চিকিৎসক, জাদুকর এবং পুরোহিতের ভূমিকা পালন করতেন। বর্তমানকালেও আদিম-সামাজিক ব্যবস্থায় বসবাসকারীদের মধ্যে উইচ-ডক্টর বা রোজাদের প্রভাব দেখা যায়। আদিম জাতিদের মধ্যে রোজাদের খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হতো।
রোজারা তাদের ডাকিনীবিদ্যা খাটিয়ে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিতে পারত। চোর বা হত্যাকারী ধরা ও শাস্তি প্রদানে রোজাদের অপরিহার্য ভূমিকা ছিল। এ ছাড়াও তারা জাদুবিদ্যার সাহায্যে রোগ নির্ণয় এবং এর প্রতিকার করতেন। তারা তাদের শিশুদের রোগাক্রান্ত করতে পারতেন এবং মানুষের মৃত্যুও ঘটাতে পারতেন। মানুষের মৃত্যু ঘটানোর জন্য তারা নানা ধরনের পদ্ধতি অবলম্বন করতেন। কখনো মানুষের একটি ছোট আকৃতির পুতুল তৈরি করে তাতে পিন বিদ্ধ করতেন। আবার কখনো কোনো লোকের চুল বা নখের টুকরো সংগ্রহ করে তা মাটিতে পুঁতে রাখতেন। এগুলো যখন আস্তে আস্তে শুকিয়ে যেত মানুষটিও ক্রমেই মৃত্যুমুখে পতিত হতো। রোজারা প্রায়ই রোগের চিকিৎসার জন্য গাছ-গাছড়া, লতাপাতা ব্যবহার এবং রোগের সংক্রমণ দূর করার জন্য জল ব্যবহার করত। কখনো তারা জাদুকরী পাথরসহ জল ছিটিয়ে দিত।
তারা জাদুকরী গান, প্রার্থনা এবং আশ্চর্য ভঙ্গিমায় নৃত্য করত। এর উদ্দেশ্য ছিল সাধারণ মানুষের মনকে প্রভাবিত করা। রোজারা সব সময় রঙিন পোশাক পরত, মুখোশ ধারণ এবং মুখমণ্ডল চিত্রিত করত। কেউ কেউ পশুর চামড়াও পরিধান করত। বস্তুত মানুষকে সম্মোহিত করত। আর লোকজন বিশ্বাস করতে বাধ্য হতো যে তাদের সৌভাগ্যের জন্য রোজারাই দায়ী।
👺 ভুডু বনাম শামান
ভুডু (Voodoo) হচ্ছে এক ধরনের ব্ল্যাক ম্যাজিক বা ডাকিনীবিদ্যা। শোনা যায়, ভুডুবিদ্যার সাহায্যে নাকি কবরের লাশ জ্যান্ত করে তাকে গোলামের মতো খাটানো যায়। শামানের কাজও মৃত মানুষের আত্মা নিয়ে। তবে ভুডুর সঙ্গে শামানদের পার্থক্য হলো— এরা মন্দ আত্মার বিরুদ্ধে লড়াই করে। মন্দ আত্মাকে কাজে লাগায়। ভুডু এক ধরনের অপবিদ্যা। যারা ভুডুবিদ্যা জানে, তারা নাকি ইচ্ছা করলেই যাকে খুশি তার ক্ষতি করতে পারে। তাই এ বিদ্যায় পারদর্শীদের অনেকেই এড়িয়ে চলেন।
তবে শামান সব সময় ন্যায়ের পক্ষে কাজ করে। শামানকে কেউ বলে জাদুকর, কেউ কবিরাজ। শামান কথাটি এসেছে সাইবেরিয়ার তুঙ্গুস ভাষী মেষ পালকদের কাছ থেকে। অষ্টাদশ শতাব্দীর ভ্রমণকারীরা প্রথম শামানদের ব্যাপারে বিশ্ববাসীকে অবহিত করে। জানা যায়, শামানরা এমন ধরনের মানুষ যাদের রয়েছে অবিশ্বাস্য শক্তি। মৃত ব্যক্তির আত্মার কাছ থেকে জ্ঞান সংগ্রহ করে তারা। ইচ্ছা করলেই নাকি নশ্বর দেহ ত্যাগ করে স্বর্গ বা নরকে স্বচ্ছন্দে প্রবেশ করতে পারে। শামানদের প্রধান বাসস্থান এক সময় সাইবেরিয়া হলেও সোভিয়েতদের অত্যাচারে তারা দেশ ত্যাগে বাধ্য হয়। তারা ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বের নানা জায়গায়। শামান বর্তমানে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে উত্তর আমেরিকা এবং পশ্চিম ইউরোপের শহরাঞ্চলেও। শামানরা তাদের নানা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড প্রদর্শনের জন্য ভ্রমণ করছে চিলির সান্তিয়াগো থেকে শুরু করে কোরিয়ার সিউল পর্যন্ত। যদিও অনেক দেশের সরকার শামানিক চর্চাকে অবৈধ এবং বিপজ্জনক বলে বর্ণনা করেছে। কিন্তু রোমান্টিক মানুষের কাছে শামান হলো ধর্মীয় অভিজ্ঞতা লাভের গাইড। আর জাতীয়তাবাদীরা শামানকে মনে করে প্রাচীন সাংস্কৃতিক জ্ঞানের বাহক।
👺শামানদের ইতিবৃত্ত
শামানদের মতে, আমাদের চারপাশে যত উপাদান রয়েছে সব কিছুর মাঝে আছে আত্মার অস্তিত্ব। ‘ভুডু’ কথার অর্থও ‘আত্মা’। এই শব্দটির উৎপত্তি ফন জাতির কাছ থেকে। এরা ইউয়ি সম্প্রদায়ের আত্মীয়। ভুডু চর্চার উৎপত্তি হাইতিতে। তবে আফ্রিকায় এর চর্চা ব্যাপক। ব্রাজিল, জ্যামাইকাতেও কিন্তু কম ভুডু চর্চা হয় না। তবে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নাম। যেমন, হাইতিতে বলা হয় ভুডু, ব্রাজিলে ক্যানডোমবল, জ্যামাইকাতে ওবিয়াহ ইত্যাদি। পশ্চিম আফ্রিকার মানুষ সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস করে ভুডুতে সেখানকার কমপক্ষে ২৫ লাখ মানুষ এ বিদ্যার অনুরাগী। এ চর্চা সবচেয়ে বেশি হয় আফ্রিকার ঘানায়। ঘানার ককুজানের অধিবাসীরা এ বিদ্যাটির সাংঘাতিক অনুরাগী। এরা অসুখ-বিসুখে সরকারি হাসপাতালের ডাক্তারদের কাছে যাওয়ার চেয়ে ভুডু চিকিৎসকদের ওপর অনেক বেশি ভরসা করে।
শামানরাও তাই। আত্মার ওপর এদের বিশ্বাস গভীর। এদের ধারণা, আত্মা তাদের সব বিপদ থেকে রক্ষা করবে। বংশপরম্পরায় এ বিশ্বাস চলে আসছে তাদের মাঝে। আফ্রিকায় যারা ভুডু চর্চা করে তারাও কিন্তু বংশানুক্রমে এ কাজ করে আসছে। আফ্রিকান বাবা-মা তাদের সন্তানদের এ বিদ্যা চর্চায় উৎসাহ জোগায়। প্রতিদিনই সকালে পূজারিরা স্থানীয় দেবতাদের উদ্দেশে নৈর্বেদ্য অর্পণ করে তারপর নিজের কাজে বের হয়। শামানরা শুধু বিশ্বাস করে আত্মায়। তাদের কোনো দেবতা নেই। তবে ভুডু শুধু বিশ্বাস করে আত্মায়। তাদের কোনো দেবতা নেই। তবে ভুডু অনুসারীদের বিভিন্ন দেবতা আছে। যেমন ফ্লিমানি কোকু হলো রোগ মুক্তির দেবতা, হেভিও সো হলো, বিদ্যুৎ এবং ব্রজের দেবতা, মেমি ওয়াটা ধন-সম্পদের দেবী ইত্যাদি। দেবতার ওপর তাদের এত বিশ্বাস যে, তারা মনে করে আগুন তাদের ক্ষতি করতে পারে না। ছুরি দিয়ে পেট কাটলেও তারা ব্যথা পায় না। তারা বলে, দেবতারা তাদের সব বিপদ থেকে রক্ষা করে।
শামানরাও বলে আত্মা তাদের সব রোগ মুক্তির পথ বাতলে দেয়। যারা এ সংস্কৃতিতে বিশ্বাসী, তারা বলে শামানদের রয়েছে অলৌকিক ক্ষমতা। এরা আত্মার শক্তিতে বলীয়ান হয়ে স্বাস্থ্য, খাদ্য, উর্বরতা বিষয়ক সব সমস্যারও সমাধান করে দিতে পারে। শামানদের ব্যাপ্তি সাইবেরিয়া থেকে ল্যাপল্যান্ড, বিব্বত, মঙ্গোলিয়া, উত্তর এবং দক্ষিণ আমেরিকা (বিশেষ করে আমাজন এলাকায়) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, এমনকি ভারতেও বিস্তৃত। পূর্ব ভারতে সোরা নামে এক উপজাতি আছে, জঙ্গলে বাস করে। এরাও শামান সংস্কৃতিতে বিশ্বাসী। সোরা উপজাতির লোকেরা মৃতের সঙ্গে কথা বলে। এখানে শামানের ভূমিকা সাধারণত পালন করে মহিলারা। তারা দুই ভুবন অর্থাৎ পৃথিবী ও স্বর্গের মাঝে সমন্বয় সাধন করে বলে শামান অনুসারীদের বিশ্বাস। মহিলা শামানকে কবর দেওয়া হয়। এরপর তার আত্মা চলে যায় অন্য ভুবনে। সেখানে মৃত ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে সে। লোকে মহিলাকে কথা বলতে দেখে। সোরাদের মতে, মৃত্যু মানে কারও অস্তিত্বের ধ্বংস নয়। মৃত্যু তাদের কাছে নতুন আরেক জীবন মাত্র। মৃত্যুর পরেও আত্মা যথেষ্ট শক্তিশালী থাকে, তাদের আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলে— এমনটিই বিশ্বাস সোরা উপজাতির।
👺শয়তানের প্রতীক
ব্ল্যাক ম্যাজিকের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো প্রতীক ও সংকেতচিহ্নের ব্যবহার। অনিষ্টকারী শয়তানের প্রতীককে ব্ল্যাক ম্যাজিশিয়ানরা কাজে লাগিয়ে এসেছেন যুগ যুগ ধরে। শয়তানের প্রতীক হিসেবে বিভিন্ন সভ্যতার মানুষের বিশ্বাস ছিল সেটি হচ্ছে— শিং। ব্ল্যাক ম্যাজিক চর্চায় শিং তাই অপরিহার্য। এক সময়ের বিখ্যাত জাদুকর ছিলেন জোহান রোসা। তার একটা মন্ত্রপুত আংটি ছিল। যেটায় একটা প্রেতাত্মাকে তিনি আটকে রেখে ছিলেন আর এটাকে দিয়ে সব কাজ করাতেন। তার মৃত্যুর পরে প্রকাশ্য জনসভায় আংটিটা হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে ভেঙে ফেলা হয়েছিল। গর্ভবতী নারীদের প্রসব বন্ধ করা থেকে শুরু করে যৌনাকাঙ্ক্ষা চিরতার্থ করার মতো বীভৎস সব জাদু বিধানের চর্চা হতো তখন। এ সময়ে বিশ্বাস করা হতো বশীকরণের মাধ্যমে মানুষকে দাস বানিয়ে রাখা যায়। যে কোনো বিপজ্জনক কাজে যাওয়ার আগে ‘প্রয়োজনীয় মন্ত্রপুত জামা’ পরে যাওয়ার রীতি ছিল, কুমারী মেয়ের বড় দিনের এক সপ্তাহ ধরে এই ধরনের জামা ঘরে বুনত। ‘বান’ ছেঁড়ার কথা বাংলাদেশে অপরিচিত নয়, মধ্যযুগের এই (Magical Arrow) ধারণাটার ব্যাপক প্রচার ছিল। বিশ্বাস করা হতো এভাবে মানুষের ক্ষতি করা সম্ভব! মধ্যযুগে রেনেসাঁর আলো যতই ছড়াক না কেন, ব্ল্যাক ম্যাজিশিয়ানদের হাত থেকে কেউই রক্ষা পায়নি।
👺জাদুবিদ্যার নানান প্রকার
জাদুবিদ্যার প্রচলন সব সময়ই কৌতূহলজনক। সেজন্য বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সমাজবিদ- নৃতাত্ত্বিকরা সমাজে প্রচলিত জাদু বিধানগুলো পর্যালোচনা করে এর শ্রেণি বিভাগ করার চেষ্টা করেছেন। যেমন স্যার জেমস জর্জ ফ্রেজারের মতে জাদুবিদ্যার বিধানগুলো প্রধানত দুই রকমের হোমিওপ্যাথিক এবং কনটেজিয়াস ম্যাজিক।
হোমিওপ্যাথিক ম্যাজিক সব সময়ই শত্রু ধ্বংসের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়। এক্ষেত্রে শত্রুর প্রতিমূর্তি [মোম, মাটি, কাঠ, কাপড়] বা ছবি ইত্যাদি তৈরি করে পুড়িয়ে বা ছুরি দিয়ে কেটে ধ্বংস করা হয়। ধারণা এই যে, মূর্তিটা যে যন্ত্রণা পাচ্ছে, শত্রুও তেমন যন্ত্রণা বা আঘাত পাচ্ছে। এটাকে ব্ল্যাক ম্যাজিক বলে। তবে এই জাদু আবার অনেক সময় মানুষের উপকার বা ভালোর জন্যও ব্যবহার করা হয়। যেমন ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপে এমন একটা জাদু বিধান আছে, কোনো নারীর সন্তান হচ্ছে না, তখন একটা কাঠের ছোট শিশু বানিয়ে নিঃসন্তান রমণীটির কোলে বসিয়ে আদর করে। এর ফলে তার সন্তান হবে এমন ভাবা হয়। কখনো কখনো রোগের চিকিৎসার জন্যও এই ধরনের জাদুর প্রয়োগ দেখা যায়। অন্যদিকে কনটেজিয়াস ম্যাজিক হচ্ছে মানুষের শরীরের বিভিন্ন অংশ বিশেষ যেমন চুল, নখ, থুথু বা পরিধেয় বস্ত্রের মাধ্যমে জাদু করে মানুষের ক্ষতি বা উপকার করা। এক্ষেত্রে শত্রুর আঙ্গুলের নখ, চুল, ভ্রু, থুথু -এসব সংগ্রহ করে মোমের সাহায্যে শত্রুর একটা অবিকল প্রতিরূপ তৈরি করা হয়। প্রতিমূর্তিটি ছয় দিন ধরে মোমের তাপে ঝলসাতে হবে এবং সাত দিনের দিন মূর্তিটি পুড়িয়ে ফেললে শত্রুর মৃত্যু হবে! জাদুবিদ্যার ধরন আর প্রকারভেদ নিয়ে অনেকে অনেক মত দিয়েছেন, তাদের সব মতবাদ একসঙ্গে করলে বলা যায় জাদুবিদ্যা প্রধানত তিন ধরনের। প্রথমত, সৃজনধর্মী জাদু বা হোয়াইট ম্যাজিক। ফসলের ভালো উৎপাদন, বৃষ্টি নামানো, গাছে ভালো ফল হওয়া প্রেম বা বিয়ে ইত্যাদির উদ্দেশ্যে এ জাদু ব্যবহৃত হয়। দ্বিতীয়ত প্রতিরোধক জাদু। এই জাদুকেও হোয়াইট ম্যাজিকের মধ্যেই ফেলা যায়। এটা বিপদ-আপদ এড়ানো, রোগব্যাধি দূর করা আর কালো জাদুর প্রভাব এড়ানোর কাজে ব্যবহার করা হয়। আর সর্বশেষ প্রকারটিই হচ্ছে ব্ল্যাক ম্যাজিক বা ধ্বংসাত্মক ম্যাজিক। এটি রোগব্যাধি সৃষ্টি, সম্পত্তি ধ্বংস, জীবন নাশের কাজে ব্যবহার করা হয়। ডাইনিবিদ্যায় এর প্রয়োগ বেশি দেখা যায়। সেই প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে আজ পর্যন্ত এর প্রভাব দেখা যায় রাজনীতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতির ওপর। জাদুবিদ্যার প্রাচীন ইতিহাস যদি আমরা খুঁজে দেখতে চাই তাহলে আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে সেই প্যালিওলিথিক যুগের গুহামানবদের গুহাচিত্রের দিকে। অরিগেনেসিয়া নামক গুহায় বেশ কিছু মুখোশ পরা মানুষ আর জন্তু জানোয়ারের ছবি দেখা যায়, যেখানে মানুষগুলোর হাতের আঙ্গুলের প্রথম গিঁট পর্যন্ত কাটা! যদিও নৃতাত্ত্বিকেরা এদের কুষ্ঠরোগাক্রান্ত মানুষ বলে বর্ণনা করেছেন। তবে জাদুবিদ্যা বিশারদদের মতে মৃত্যুকে জয় করার জন্যই হাতের আঙ্গুল কেটে তা নিবেদন করার রীতি সে আমলে প্রচলিত ছিল। দেহের অংশ বিশেষ দিয়ে গুণ [ব্ল্যাক ম্যাজিক] করার রীতি এদেশেও দেখা যায়। প্রাচীন ধর্মগ্রন্থগুলোতেও নানা আঙ্গিকের জাদুবিদ্যা চর্চার প্রমাণ পাওয়া যায়। সমসাময়িক ধর্মগুরু আর জনগণের মধ্যে। জাদুবিদ্যার এই চর্চা কখনই থেমে থাকেনি। গোপনে একদল ব্ল্যাক ম্যাজিকের চর্চা করে যাচ্ছে।
👺নানান দেশে প্রাচীনকাল থেকেই...
ব্ল্যাক ম্যাজিকের চর্চা হয়ে আসছে বহুকাল আগে থেকেই। কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠী বা সভ্যতার লোক নয় ইতিহাস বলে বিভিন্ন সভ্যতায় বিভিন্ন গোষ্ঠীর মানুষের একটি অংশ কালো জাদুর চর্চা করে আসছে। কালো জাদু তাই কোনো দেশ কাল পাত্রে সীমাবদ্ধ নয়। ইহুদিরা মিসরে বন্দী অবস্থায় অবস্থানের সময়েই মিসরীয় জাদুবিদ্যার দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল। অবশ্য তাদের নিজেদেরও আলাদা বৈশিষ্ট্যময় জাদু বিশ্বাস ছিল। ইহুদি জাদুকরেরা বাষ্পস্নানের মাধ্যমে বলি আর উপহার দিয়ে অতিপ্রাকৃত শক্তিকে বশ করার চেষ্টা করত। এদের জাদু চর্চায় স্থূল যৌনাচার হতো। এ ছাড়া অল্পবয়স্ক বালকদের ব্যবহার করত অতীন্দ্রিয় শক্তির সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে। কালো জাদুর ইতিহাস বলে, ব্ল্যাক ম্যাজিকে বিশেষ দক্ষ ব্যক্তিদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ছিলেন কিং সলোমন। তার ‘দ্য কি অব সলোমানদ’ বইটি পরবর্তীকালে জাদুবিদ্যার সর্বশ্রেষ্ঠ বই হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে।
ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীন ধর্মগ্রন্থগুলোতেও জাদুবিদ্যা আর ধর্মের একটা জটিল সংমিশ্রণ দেখা যায়। এখনকার সমাজেও এমন অনেক বৈদিক জাদুবিদ্যাগত প্রক্রিয়া এখনো চালু আছে। হরপ্পা মহেঞ্জোদারতে উত্খননে প্রাপ্ত রিং স্টোনগুলো জাদুবিদ্যায় ব্যবহার করা হতো বলে জন মার্শাল ধারণা করেন। এ ছাড়া জাপানের প্রাচীন শিন্টো ধর্মের মধ্যে জাদুবিদ্যা চর্চার কথা জানা যায়। জাপানিরা বিশ্বাস করে, চালের মধ্যে ব্ল্যাক ম্যাজিক প্রতিহত করার বিশেষ শক্তি আছে। এ ছাড়া রাস্তার সঙ্গমস্থলও তাদের কাছে বিশেষভাবে পবিত্র। এসব স্থানে তারা এখনো জননেন্দ্রিয়র প্রতীক চিহ্ন স্থাপন করে, বিশ্বাস করে এই প্রতীক অশুভ শক্তিকে দূরে সরিয়ে রাখবে! জাপানিদের মতো চীনাদেরও ভূতপ্রেত সম্পর্কে বেশ ভালোই ভয়ভীতি ছিল। মজার ব্যাপার হলো, চীনের ঘরবাড়ি ও পুল নির্মাণে একটা বিশেষ দেবতা চীনাদের প্রভাবিত করেছে। এই দেবতার নাম হলো শা। শা হলো একটা অপদেবতা। আর চীনারা বিশ্বাস করে এই অপদেবতা সব সময়ে সোজা রেখা বরাবর চলে। তাই এটাকে প্রতিহত ছাদে আঁকা হতো বক্রতা আর কোণ! গ্রিকদের জাদুবিদ্যার জন্য বিশেষ বর্ণমালার সৃষ্টি করেছিল। এগুলো লেখা হতো পবিত্র কালি দিয়ে। আর লেখার সময় বার বার পাঠ করা হতো।
👺ছোট্ট শিশুর দেহে ৫০ সুই
প্রাচীনকালে কালো জাদুর বহু ব্যবহারের কথা শোনা গেলেও এখন ততটা বড় আকারে জাদুচর্চা করার কথা শোনা যায় না। তবে একেবারেই থেমে নেই কালো জাদু। সাম্প্রতিককালেরএমন দুটি ঘটনা মিডিয়ায় আলোড়ন তুলেছে। ব্ল্যাক ম্যাজিকের শিকার হয়ে সরাসরি হাসপাতালে ভর্তি হয় মাত্র দুই বছর বয়সী এক শিশু। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাকে দ্রুত চিকিৎসা দিতে গিয়ে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলেন চিকিৎসক। কারণ এ-ক্সরে রিপোর্টে শিশুটির শরীরের ভিতরের বিভিন্ন অংশে পাওয়া গেল ৫০টির মতো সুই। সুইগুলো দেখেই ব্ল্যাক ম্যাজিকের কথা মনে পড়ে গেল। ৫০টি সুইয়ের মাঝে ১৭টি ছিল বাচ্চা ছেলেটির পরিপাকতন্ত্রের ভিতরে। এই ঘটনা ছড়িয়ে পড়ল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ঘটনার তদন্তের জন্য পুলিশ ডাকা হলো। পুলিশও প্রাথমিক মন্তব্য করল, কেউ একজন ব্ল্যাক ম্যাজিক বা কালো জাদুর অংশ হিসেবে ছেলেটির দেহে সুই ঢুকিয়ে দিয়েছে। প্রথম সুইটি পাওয়া গেল শিশুটির বাম ফুসফুসের ভিতরে। এক্স-রে করার পর দেখা গেল শিশুটির পেট, গলা, ঘাড় ও পায়ে মোট ৫০টির মতো সুই ঢুকানো হয়েছে। এরপর আর বুঝতে বাকি থাকে না শিশুটি ভয়াবহ ব্ল্যাক ম্যাজিকের শিকার হয়েছে। শিশুটিকে তার এক আত্মীয় হাসপাতালে নিয়ে আসে কিন্তু নিরাপত্তার স্বার্থে তার নাম প্রকাশ করেনি বিখ্যাত ডেইলি মেইল। ছেলেটির মায়ের নাম মারমা সুজা স্যান্তস। তিনি পুলিশকে জানান, যখন তিনি কর্মস্থলে যেতেন তখন শিশুটিকে দেখাশোনা করতেন শিশুটির দাদিমা। কিন্তু কেউ নিশ্চিত নন, শিশুটির দেহে কে সুই ঢুকিয়েছেন। ধারণা করা হয় তার সৎ বাবা এই কাজটি করে থাকতে পারেন কারণ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি ব্ল্যাক ম্যাজিক অনুশীলন করতেন। অভিযুক্ত অভিযোগ অস্বীকার করলেও এ নিয়ে বিস্তারিত তদন্ত চলছে।
👹 যেকোনো প্রশ্ন ও পরামর্শে যোগাযোগ নাম্বার : IMO,  01757786808

বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৯

জ্বীন ‌ভুত ‌প্রেত ‌আত্না ‌থেকে ‌বাচার ‌পথ..

 জ্বিন ‌ভুত ‌প্রেত আত্না থেকে বাচার উপায়.

আমাদের মধ্যে অনেকেই এরকম আছেন যারা রাতে ঘুমানোর পর ঘুমের মধ্যে অনেকেই ভূত-প্রেতের স্বপ্ন দেখে ভয় পান। কিন্তু আপনি জানেন কি এরকম স্বপ্ন দেখার অর্থ কি। এর অর্থ হচ্ছে আপনার আশেপাশে সবসময়ই অশুভ শক্তি ঘোরাফেরা করছে। আর আপনার আশেপাশে যদি অশুভ শক্তি ঘোরাফেরা করে শুধু যে আপনাকে ঘুমের মধ্যেই অশান্তি সৃষ্টি করবে তা নয় আপনার জীবনে যেকোনো সময় যেকোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। এক্ষেত্রে কেউ যদি আপনার উপর প্রয়োগ করে থাকে তাহলে অনেক সময় আপনার পাড়ের অভ্যন্তরে খারাপ শক্তির প্রকোপ বেড়ে যায়। সেক্ষেত্রেও আপনার জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠতে খুব বেশি সময় নেয় না। এজন্য আপনি যদি এ সমস্ত কালো শক্তি অপশক্তি ভুত-প্রেত এর প্রকোপ থেকে রক্ষা পেতে চান তাহলে অবশ্যই সে বিষয়ে আপনাকে জানতে হবে। আপনি এর থেকে কিভাবে মুক্তি পেতে পারেন সে বিষয় নিয়ে আজকে আমাদের এই প্রবন্ধ।
আমাদের আশেপাশে যদি খারাপ শক্তির প্রকোপ বেড়ে যায় তাহলে শুধুমাত্র ঘুমের মধ্যেই নয় আমাদের জীবনে বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। যেমন ধরুন আপনি বাড়িতে একা একা আছেন কেউ যেন আপনাকে ফলো করছে, হয়তো বা অনেক সময় আপনার হঠাৎ করে ঠান্ডা লাগতে শুরু করেছে, আপনার শরীর একটু ছমছম করছে, হঠাৎ করেই আপনার বাড়ির আশপাশ থেকে একটা কুকুর চিৎকার দিয়ে উঠলো এছাড়াও আপনার ঘরের দরজায় একটা শব্দ শোনা গেল। আপনার সাথে যদি এরকম কোন কিছু হয়ে থাকে তাহলে আজকে আমরা আপনাদের সামনে তুলে ধরছি সেগুলো যদি আপনারা নিয়মিত পাঠ করতে পারেন তাহলে খারাপ কোনো অপশক্তি আপনাকে কোন ক্ষতি করতে পারবে না। আর সেই সাথে আপনার উপর যদি কেউ কালো জাদু প্রয়োগ করে থাকে তাহলে তার প্রভাব খুব দ্রুত নিষ্পত্তি হয়ে যাবে।
এখন হয়তো আপনার কাছে প্রশ্ন হতে পারে তাহলে কোন মন্ত্র গুলির মাধ্যমে আমরা এর থেকে রেহাই পাব। তো চলুন আমরা সে সমস্ত মন্ত্রগুলি দেখে নেই-
১. সিদ্ধিদাতা মন্ত্রঃ হিন্দু ধর্ম শাস্ত্র অনুযায়ী আমরা যদি প্রতিদিন নিয়ম করে পাঠ করতে পারি তাহলে আমাদের থেকে খারাপ আত্মা দূরে থাকবে আর সেই সাথে আমাদের মানসিক শক্তি প্রচুর পরিমাণে বৃদ্ধি পাবে। সেই সাথে আপনার মনের ভিতর যত রকম থাকবে তা আপনি সিদ্ধিদাতা মন্ত্র যদি পাঠ করে থাকেন তাহলে তা খুব দ্রুত নিষ্পত্তি হয়ে যাবে। সিদ্ধিদাতা মন্ত্রটি হচ্ছে -"ওম ঘথ ত্রাহা সায়া নামাহ"। এ বিষয়ে দিক থেকে বর্তমান সমাজের দিকে তাকালে দেখা যায় যে বেশিরভাগ যুবকরা মানসিক সমস্যায় জর্জরিত। আর মানসিক সমস্যায় ভুগে থাকে তাহলে তাদের শরীরের মধ্যে বিভিন্ন রকমের রোগ বাসা বাঁধে। বর্তমান সমাজের এই যুবকেরা যদি নিয়মিতভাবে এই সিদ্ধিদাতা মন্ত্রটি পাঠ করে থাকে তাহলে তাদের সমস্ত রকম বাধা বিপত্তি পেরিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে কোন রকম সমস্যা হয় না।
২. হনুমানজি মন্ত্রঃ আপনি যদি প্রতিনিয়ত হনুমানজির মন্ত্র পাঠ করতে পারেন তাহলে আপনার উপর যদি কেউ কালো জাদু প্রয়োগ করে থাকে তাহলে তার প্রভাব খুব দ্রুত নিষ্পত্তি হয়ে যাবে। সেইসাথে এই হনুমান মন্ত্র পাঠ করার ফলে আপনার কাছে কোন প্রকার অপআত্মা ঘেঁষতে পারবে না। আপনি যদি মনে করেন আপনার আশেপাশে অশুভ শক্তির প্রভাব ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে তাহলে আপনি প্রতিনিয়ত হনুমানজির এই মন্ত্রটি পাঠ করুন। হচ্ছে - "ওম হানুমাতে নামাহ"।এই মন্ত্রটি যখন আপনি পাঠ করবেন তার সাথে অবশ্যই হনুমান চল্লিশা পাঠ করতে কোন ভাবেই ভুল করবেন না। আপনি যদি এভাবে করতে পারেন তাহলে আপনার মনের জোর প্রচুর পরিমাণে বৃদ্ধি পাবে আর সেই সাথে আপনি বিভিন্ন দিক থেকে বিভিন্ন ভাবে উপকৃত হবেন যা আপনি কখনোই কল্পনা করতে পারবেন না।
৩. দশভূজা মন্ত্রঃ দশভূজা মায়ের মন্ত্র আপনি যদি প্রতিনিয়ত পাঠ করতে পারেন তাহলে আপনার ওপর যদি কেউ কোন প্রকার কালো জাদু প্রয়োগ করে থাকে এবং সেই সাথে আপনার আশেপাশে যদি কোন প্রকার অশুভ শক্তি বিরাজ করে তাহলে তা খুব দ্রুত নির্মূল হয়ে যায়। এ সমস্ত খারাপ শক্তি এবং কালো জাদুর প্রভাবে আপনি যদি ভয় পেয়ে থাকেন এবং সবসময়ই স্বপ্ন দেখতে থাকেন তাহলে এই মন্ত্রটি পাঠ করুন। আমরা সবাই জানি দশভূজা মা হচ্ছেন শক্তির প্রতীক। এজন্য এই মন্ত্রটি আমরা সবসময় পাঠ করব। মন্ত্রটি হচ্ছে -"ওম সার্বা স্বরূপা সার্বেশা, সর্বো শক্তি সমনভিতা ভায়াভায়াসত্রাহি নো দেভি, দূর্গা দেবী নামাস্তুতে"।এই মন্ত্রটি যদি আপনি নিয়মিত ভাবে পাঠ করতে পারেন তাহলে আপনার মনের শক্তি এমনভাবে বৃদ্ধি পাবে আপনার কাছে কোন প্রকার কালো জাদু বা কোনো অশুভ শক্তি আপনাকে কোন ক্ষতি করতে পারবে না।
৪. মহাদেব মন্ত্রঃ আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যাদের মধ্যে ভূতের ভয় তো আছেই কিন্তু তার থেকেও অধিক ভয় হচ্ছে মৃত্যু। আপনি যখন জন্মগ্রহণ করেছেন তখন মৃত্যু আপনারা সেই এ কথাটি চিরসত্য। এই সত্যটিকে আপনারা কখনোই অস্বীকার করতে পারবেন না। কিন্তু তারপরও কিছু অপ্রত্যাশিত ভয় থাকে যেগুলো আপনার জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে। এ সমস্ত অপ্রত্যাশিত ভয় কে আপনার নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য আপনি অবশ্যই এই মন্ত্রটি পাঠ করবেন। আর সেই সাথে আপনি যখন জন্মগ্রহণ করেছেন তখন আপনার মৃত্যু আসে একথাটি যেমন ঠিক আবার এই মৃত্যু ভয় কে আপনি কিভাবে জয় করবেন সেটি আপনাকে এই মন্ত্র দ্বারা আপনাকে সে দিকে নিয়ে যাবে। মন্ত্রটি হচ্ছে -"ওম ত্রম্বকে ইযামাহে সুগান্ধিয়াম পুষ্টি বার্ধানাম উর্ভারুকামিভা বান্ধানাথ মৃত্যুমুকশিয়া মামরিতাত"।
৫.প্রভু বিষ্ণু মন্ত্রঃ আপনার বর্তমান সময় কি অনেক খারাপ এর মধ্য দিয়ে যাচ্ছে? সেইসাথে ভূত-প্রেত অপশক্তি আপনাকে বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে? তাহলে দেরি না করে আজ থেকেই আপনি প্রভু বিষ্ণুর শক্তিশালী এই মন্ত্রটি পাঠ করা আরম্ভ করুন। আপনি যদি প্রতিনিয়ত নিয়ম করে প্রভু বিষ্ণুর এই মন্ত্রটি পাঠ করতে পারেন তাহলে আপনার আশেপাশের সমস্ত প্রকার অশুভ শক্তির বিনাশ হয়ে যাবে। আর সেই সাথে আপনার শুভ শক্তি সব সময় সাথী হয়ে উঠবে। শুধু তাই নয় যত রকম ভূত প্রেত অপশক্তি আপনাকে বিরক্ত করছে তারাও আপনার নিকট থেকে দূরে চলে যাবে। এজন্য অবশ্যই প্রভু বিষ্ণুর এই শক্তিশালী মন্ত্র পাঠ করা থেকে বিরত থাকবেন না। অবশ্যই এই মন্ত্রটি পাঠ করবেন। প্রভু বিষ্ণুর শক্তিশালী মন্ত্র টি হচ্ছে -"ওম ওহরজিতায়া নমহ!"
 যেকোনো প্রশ্ন ও পরামর্শে যোগাযোগ নাম্বার.  01757786808 

রবিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৯

সুপার ‌ভিষন ‌এ্যাটক ‌‌সাধনা .

.ত্রাটক অনেকেই ত্রাটক সমন্ধে জানতে চেয়েছেন,,, যদিও এটা অতি গোপনীয় বিষয়, এর পরও ত্রাটক নিয়ে এক্টা পোস্ট করলাম,,,,,, ,,
,
,
পৃথিবীতে এখন পর্যুন্ত যতগুলো দোওয়া,
তাবিজ, মন্ত্র, তন্ত্র, টোনা, টোটকা,
নকশা
ইত্যাদি আছে তার ভিতর সবচাইতে
পাওয়ারফুল হলো “ত্রাটক”।
এই “ত্রাটক” সাধনের ফলেই আগের
দিনের মনি ঋষিগন ও অন্নান্য পীর
দরবেশগন,
নানান অলৈকিক কর্মকান্ড করেগেছেন।
বর্তমানে আমাদের মাঝে যে সকল
ব্যক্তিগন দোওয়া / মন্ত্র ইত্যাদি নিয়ে
সফলকাম
হয়ে থাকেন বা চেষ্টা করছেন তাদের
মাঝে বেশির ভাগই বিফল কারন-
বর্তমানে মানুষের মাঝে ধর্য্য ও সময় দুই
খুব কম, এবং সবচাইতে কম
ন্যায়পরায়নতা
সততা, নিষ্ঠা, মুখের কথার মূল্যবোধ।
তার চাইতে বেশি
সমস্যা হচ্ছে পেটের চিন্তা। আমাদের
প্রয়োজন নগদ অর্থ এবং সেটাও জলদি।
আর তাই আমরা এগুলো থেকে অনেক
পিছিয়ে পড়েছি। অনেকেই তো বিশ্বাষ
পর্যন্ত করতে চায় না, যে মানুষের
পক্ষে এ সকল কাজ করা সম্ভব।।
তাই বর্তমানে শুধু মাত্র একটি পথ খোলা
আছে একজন সাধারন মানুষ
অসাধারন অলৈকিক ক্ষমতার অধিকারী
হতে পারার, আর তা হলো “ত্রাটক”।
কারন ত্রাটক সাধনায় সময় অত্যন্ত কম
লাগে, একজন মানুষের মাঝে গুটিকয়েক
লক্ষন দেখেই বোঝা যায় সে এই সাধনা
করতে সক্ষম কি না। এর ফলাফল দ্রুত
ঠিক যেমন বর্তমানে রিমট-কন্ট্রোল এর
ব্যবহারের মতই।
মানুষের কল্পনার চাইতেও শক্তিশালী
এই ক্ষমতা।
ব্যবহারের জন্য নিয়ম নিতি নাই বল্লেই
চলে।
শ্রেনীবিভাগ প্রায়ই একই প্রকার।
তবে শিখার খরচ তুলনা মুলক একটু বেশি।
যে কেউ শুধু অনুশিলনেই হয়ে উঠতে
পারে অতিমানব।
তবে এর সবচাইতে বড় বাধা হচ্ছে
গোপনিয়তা।
শক্তি সর্ম্পকে গোপনিয়তা রক্ষা করতে
না পারলে শক্তি নিশ্বেষ হতে পারে।
আপনি যা চান আর যা চান নি সবই
করতে পারেন এই একটি মাত্র বিদ্যায়।।
সুপার ভিষন "ত্রাটক ",
,
ত্রাটক জিনিসটি এমনই শক্তিশালী যে
আপনি আপনার চোখ দিয়ে একটি চলন্ত
রেলগাড়ীকে থামাতে পারবেন। আপনার
মন ও চোখ দিয়ে যে কোন মানুষের ক্ষতি
স্বাধন বা উপকার করতে পারবেন।
ধরুন যে আপনার সামনে দিয়ে একটি
চলন্ত রেলগাড়ি যাচ্ছে এখানে এই
স্বাধনাটি করার পর আপনি যদি আপনার
চোখের দৃষ্টি রেলগাড়ির ইন্জিনে
প্রয়োগ করেন এবং মন দিয়ে
রেলগাড়িকে থামানোর চেষ্টা করেন
তাহলে ঐ রেলগাড়িটি ততখনাত থেমে
যাবে। এভাবেই চোখ এবঙ মন দিয়ে যে
কোন কাজ সমাধা করা যাবে।
উল্লেখ্য থাকে যে এই ত্রাটক সিদ্ধি সব
থেকে সহজ এবং শক্তিশালী। এাটক সাধনার মাধমে জীবনের যে ‌কোন ইচ্ছেই
পুরন করতে পারেন তাও  খোব কম সময়ে আমাদের এই প্রতিষ্টান টি মুল অতো এাটক সাধনা ও ‌আধ্যাত্নিক সাধনার জনো
কালো জাদু তন্ত মন্তু যে কোন সাধনা প্রশিক্ষন পেতে আজি যোগা যোগ করুন ইমু 01757786808/

শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর, ২০১৯

ধ্যান ও ‌‌‌আধ্যা‌ত্মিক .‌সাধনা

ধ্যান ও ‌‌‌আধ্যা‌ত্মিক .‌সাধনা

সকল ধর্মই ‘ধ্যান’-এর উপর বিশেষ জোর দিয়াছে। যোগীরা বলেন ধ্যানমগ্ন অবস্থাই মনের উচ্চতম অবস্থা।
মন যখন বাহিরের বস্তু অনুশীলনে রত থাকে, তখন ইহা সেই বস্তুর সহিত একীভূত হয় এবং নিজেকে হারাইয়া ফেলে। প্রাচীন ভারতীয় দার্শনিকের উপমায় মানুষের মন যেন একখণ্ড স্ফটিকের মত—নিকটে যাহাই থাকুক, উহা তাহারই রঙ ধারণ করে। অন্তঃকরণ যাহাই স্পর্শ করে, … তাহারই রঙে উহাকে রঞ্জিত হইতে হয়। ইহাই তো সমস্যা। ইহারই নাম বন্ধন। ঐ রঙ এত তীব্র যে, স্ফটিক নিজেকে বিস্মৃত হইয়া বাহিরের রঙের সহিত একীভূত হয়। মনে কর—একটি স্ফটিকের কাছে একটি লাল ফুল রহিয়াছে; স্ফটিকটি উহার রঙ গ্রহণ করিল এবং নিজের স্বচ্ছ স্বরূপ ভুলিয়া নিজেকে লাল রঙের বলিয়াই ভাবিতে লাগিল। আমাদেরও অবস্থা ঐরূপ দাঁড়াইয়াছে। আমরাও শরীরের রঙে রঞ্জিত হইয়া আমাদের যথার্থ স্বরূপ ভুলিয়া গিয়াছি। (এই ভ্রান্তির) অনুগামী সব দুঃখই সেই এক অচেতন শরীর হইতে উদ্ভূত। আমাদের সব ভয়, দুশ্চিন্তা, উৎকণ্ঠা, বিপদ, ভুল, দুর্বলতা, পাপ সেই একমাত্র মহাভ্রান্তি—‘আমরা শরীর’ এই ভাব হইতেই জাত। ইহাই হইল সাধারণ মানুষের ছবি। সন্নিহিত পুষ্পের বর্ণানুরঞ্জিত স্ফটিকতুল্য এই জীব! কিন্তু স্ফটিক যেমন লাল ফুল নয়, আমরাও তেমনি শরীর নই। ধ্যানাভ্যাস অনুসরণ করিতে করিতে স্ফটিক নিজের স্বরূপ জানিতে পারে এবং নিজ রঙে রঞ্জিত হয়। অন্য কোন প্রণালী অপেক্ষা ধ্যানই আমাদিগকে সত্যের অধিকতর নিকটে লইয়া যায়। …
ভারতে দুই ব্যক্তির দেখা হইলে (আজকাল) তাঁহারা ইংরেজীতে বলেন, ‘কেমন আছেন?’ কিন্তু ভারতীয় অভিবাদন হইল, ‘আপনি কি সুস্থ?’ যে মুহূর্তে আত্মা ব্যতীত অন্য কিছুর উপর নির্ভর করিবে, তোমার দুঃখ আসিবার আশঙ্কা আছে। ধ্যান বলিতে আমি ইহাই বুঝি—আত্মার উপর দাঁড়াইবার চেষ্টা। আত্মা যখন নিজের অনুধ্যানে ব্যাপৃত এবং স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত, তাহার তখনকার অবস্থাটিই নিশ্চিতরূপে সুস্থতম অবস্থা। ভাবোন্মাদনা, প্রার্থনা প্রভৃতি অপরাপর যে-সব প্রণালী আমাদের রহিয়াছে, সেগুলিরও চরম লক্ষ্য ঐ একই। গভীর আবেগের সময়ে আত্মা স্বরূপে প্রতিষ্ঠিত হইতে চেষ্টা করে। যদিও এ আবেগটি হয়তো কোন বহির্বস্তুকে অবলম্বন করিয়া উঠিয়াছে, কিন্তু মন সেখানে ধ্যানস্থ।
ধ্যানের তিনটি স্তর। প্রথমটিকে বলা হয় (ধারণা)—একটি বস্তুর উপরে, একাগ্রতা অভ্যাস। এই গ্লাসটির উপর আমার মন একাগ্র করিতে চেষ্টা করিতেছি। এই গ্লাসটি ছাড়া অপর সকল বিষয় মন হইতে তাড়াইয়া দিয়া শুধু ইহারই উপর মনঃসংযোগ করিতে চেষ্টা করিতে হইবে। কিন্তু মন চঞ্চল। … মন যখন দৃঢ় হয় এবং তত চঞ্চল নয়, তখনই ঐ অবস্থাকে ‘ধ্যান’ বলা হয়। আবার ইহা অপেক্ষাও একটি উন্নততর অবস্থা আছে, যখন গ্লাসটি ও আমার মধ্যে পার্থক্য সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত হয় (সমাধি বা পরিপূর্ণ তন্ময়তা)। তখন মন ও গ্লাসটি অভিন্ন হইয়া যায়। উভয়ের মধ্যে কোন পার্থক্য দেখি না। তখন সকল ইন্দ্রিয় কর্মবিরত হয় এবং যে-সকল শক্তি অন্যান্য ইন্দ্রিয়ের মধ্য দিয়া ভিন্ন ভিন্ন পথে ক্রিয়া করে, সেগুলি (মনেতেই কেন্দ্রীভূত হয়)। তখন গ্লাসটি পুরাপুরিভাবে মনঃশক্তির অধীনে আসিয়াছে। ইহা উপলব্ধি করিতে হইবে। যোগিগণের অনুষ্ঠিত ইহা একটি প্রচণ্ড শক্তির খেলা। … ধরা যাক—বাহিরের বস্তু বলিয়া কিছু আছে। সে ক্ষেত্রে যাহা বাস্তবিকই আমাদের বাহিরে রহিয়াছে, তাহা—আমরা যাহা দেখিতেছি, তাহা নয়। যে গ্লাসটি আমাদের চোখে ভাসিতেছে, সেটি নিশ্চয়ই আসল বহির্বস্তু নয়। গ্লাস বলিয়া অভিহিত বাহিরের আসল বস্তুটিকে আমি জানি না এবং কখনও জানিতে পারিব না।
কোন কিছু আমার উপর একটি ছাপ রাখিল; তৎক্ষণাৎ আমি আমার প্রতিক্রিয়া জিনিষটির দিকে পাঠাইলাম এবং এই উভয়ের সংযোগের ফল হইল ‘গ্লাস’। বাহিরের দিক্ হইতে উৎপন্ন ক্রিয়া—‘ক’ এবং ভিতর হইতে উত্থিত প্রতিক্রিয়া—‘খ’। গ্লাসটি হইল ‘ক-খ’। যখন ‘ক’-এর দিকে তাকাইতেছ, তখন উহাকে বলিতে পার ‘বহির্জগৎ’, আর যখন ‘খ’-এর দিকে দৃষ্টি দাও, তখন উহা ‘অন্তর্জগৎ’। … কোন্‌টি তোমার মন আর কোন্‌টি বাহিরের জগৎ—এই পার্থক্য উপলব্ধি করিতে চেষ্টা করিলে দেখিবে, এরূপ কোন প্রভেদ নাই। জগৎ হইতেছে তুমি এবং আরও কিছুর সমবায় …।
অন্য একটি দৃষ্টান্ত লওয়া যাক। তুমি একটি হ্রদের শান্ত বুকে কতকগুলি পাথর ছুঁড়িলে। প্রতিটি প্রস্তর নিক্ষেপের পরেই দেখা যায় একটি প্রতিক্রিয়া। প্রস্তরখণ্ডটিকে বেড়িয়া সরোবরের কতকগুলি ছোট ছোট ঢেউ ওঠে। এইরূপেই বহির্জগতের বস্তুনিচয় যেন মন-রূপ সরোবরে উপলরাশির মত নিক্ষিপ্ত হইতেছে। অতএব আমরা প্রকৃতপক্ষে বাহিরের জিনিষ দেখি না …; দেখি শুধু তরঙ্গ …।
মনে উত্থিত তরঙ্গগুলি বাহিরে অনেক কিছু সৃষ্টি করে। আমরা আদর্শবাদ (Idealism) ও বাস্তববাদের (Realism) গুণ-সকল আলোচনা করিতেছি না। মানিয়া লইতেছি—বাহিরের জিনিষ রহিয়াছে, কিন্তু যাহা আমরা দেখি, তাহা বাহিরে অবস্থিত বস্তু হইতে ভিন্ন, কেন-না আমরা যাহা প্রত্যক্ষ করি, তাহা বহিঃস্থ বস্তু ও আমাদের নিজেদের সত্তার একটি সমবায়।
মনে কর—আমার প্রদত্ত যাহা কিছু, তাহা গ্লাসটি হইতে উঠাইয়া লইলাম। কি অবশিষ্ট রহিল? প্রায় কিছুই নয়। গ্লাসটি অদৃশ্য হইবে। যদি আমি আমার প্রদত্ত যাহা কিছু, তাহা এই টেবিলটি হইতে সরাইয়া লই, টেবিলের আর কি থাকিবে? নিশ্চয়ই এই টেবিলটি থাকিবে না, কারণ ইহা উৎপন্ন হইয়াছিল বহির্বস্তু ও আমার ভিতর হইতে প্রদত্ত কিছু—এই দুই লইয়া। (প্রস্তরখণ্ড) যখনই নিক্ষিপ্ত হউক না কেন, হ্রদ বেচারীকে তখনই উহার চারিপাশে তরঙ্গ তুলিতে হইবে। যে-কোন উত্তেজনার জন্য মনকে তরঙ্গ সৃষ্টি করিতেই হইবে। মনে কর … আমরা যেন মন বশীভূত করিতে পারি। তৎক্ষণাৎ আমরা মনের প্রভু হইব। আমরা বাহিরের ঘটনাগুলিকে আমাদের যাহা কিছু দেয়, তাহা দিতে অস্বীকার করিলাম …। আমি যদি আমার ভাগ না দিই, বাহিরের ঘটনা থামিতে বাধ্য। অনবরত তুমি এই বন্ধন সৃষ্টি করিতেছ। কিরূপে? তোমার নিজের অংশ দিয়া। আমরা সকলেই নিজেদের শৃঙ্খল গড়িয়া বন্ধন রচনা করিতেছি…। যখন বহির্বস্তু ও আমার মধ্যে অভিন্ন বোধ করার ভাব চলিয়া যাইবে, তখন আমি আমার (দেয়) ভাগটি তুলিয়া লইতে পারিব এবং বস্তুও বিলুপ্ত হইবে। তখন আমি বলিব, ‘এখানে এই গ্লাসটি রহিয়াছে,’ আর আমি আমার মনটি উহা হইতে উঠাইয়া লইব, সঙ্গে সঙ্গে গ্লাসটিও অদৃশ্য হইবে …। যদি তুমি তোমার দেয় অংশ উঠাইয়া লইতে সমর্থ হও, তবে জলের উপর দিয়াও তুমি হাঁটিতে পারিবে। জল আর তোমাকে ডুবাইবে কেন? বিষই বা তোমার কি করিবে? আর কোনপ্রকার কষ্টও থাকিবে না। প্রকৃতির প্রত্যেক দৃশ্যমান বস্তুতে তোমার দান অন্ততঃ অর্ধেক এবং প্রকৃতির অর্ধাংশ। যদি তোমার অর্ধভাগ সরাইয়া লওয়া যায় তো দৃশ্যমান বস্তুর বিলুপ্তি ঘটিবে।
… প্রত্যেক কাজেরই সমপরিমাণ প্রতিক্রিয়া আছে …। যদি কোন লোক আমাকে আঘাত করে ও কষ্ট দেয়—ইহা সেই লোকটির কার্য এবং (বেদনা) আমার শরীরের প্রতিক্রিয়া …। মনে কর আমার শরীরের উপর আমার এতটা ক্ষমতা আছে যে, আমি ঐ স্বয়ংচালিত প্রতিক্রিয়াটি প্রতিরোধ করিতে সমর্থ। ঐরূপ শক্তি কি অর্জন করা যায়? ধর্মশাস্ত্র (যোগশাস্ত্র) বলে, যায় …। যদি তুমি অজ্ঞাতসারে হঠাৎ ইহা লাভ কর, তখন বলিয়া থাক—‘অলৌকিক’ ঘটনা। আর যদি বৈজ্ঞানিক প্রণালীতে শিক্ষা কর, তখন উহার নাম ‘যোগ’।মানসিক শক্তির দ্বারা লোকের রোগ সারাইতে আমি দেখিয়াছি। উহা ‘অলৌকিক কর্মী’র কাজ। আমরা বলি, তিনি প্রার্থনা করিয়া লোককে নীরোগ করেন। (কিন্তু) কেহ বলিবেন, ‘না, মোটেই না, ইহা কেবল তাঁহার মনের শক্তির ফল। লোকটি বৈজ্ঞানিক। তিনি জানেন, তিনি কি করিতেছেন।’
ধ্যানের শক্তি আমাদিগকে সব কিছু দিতে পারে। যদি তুমি প্রকৃতির উপর আধিপত্য চাও, (ইহা ধ্যানের অনুশীলনেই সম্ভব হইবে)। আজকাল বিজ্ঞানের সকল আবিষ্ক্রিয়াও ধ্যানের দ্বারাই হইতেছে। তাঁহারা (বৈজ্ঞানিকগণ) বিষয়বস্তুটি তন্ময়ভাবে অনুধ্যান করিতে থাকেন এবং সব-কিছু ভুলিয়া যান—এমন কি নিজেদের সত্তা পর্যন্ত, আর তখন মহান্‌ সত্যটি বিদ্যুৎপ্রভার মত আবির্ভূত হয়। কেহ কেহ ইহাকে ‘অনুপ্রেরণা’ বলিয়া ভাবেন। কিন্তু নিঃশ্বাসত্যাগ যেমন আগন্তুক নয় (নিশ্বাস গ্রহণ করিলেই উহার ত্যাগ সম্ভব), সেইরূপ ‘অনুপ্রেরণা’ও অকারণ নয়। কোন কিছুই বৃথা পাওয়া যায় নাই।
যীশুখ্রীষ্টের কার্যের মধ্যে আমরা তথাকথিত শ্রেষ্ঠ ‘অনুপ্রেরণা’ দেখিতে পাই। তিনি পূর্ব পূর্ব জন্মে যুগ যুগ ধরিয়া কঠোর কর্ম করিয়াছিলেন। তাঁহার ‘অনুপ্রেরণা’ তাঁহার প্রাক্তন কর্মের—কঠিন শ্রমের ফল …। ‘অনুপ্রেরণা’ লইয়া ঢাক পিটান অনর্থক বাক্যব্যয়। যদি তাহাই হইত, তবে ইহা বর্ষাধারার মত পতিত হইত। যে-কোন চিন্তাধারায় প্রত্যাদিষ্ট ব্যক্তিগণ সাধারণ শিক্ষিত (ও কৃষ্টিসম্পন্ন) জাতিসমূহের মধ্যেই আবির্ভূত হন। প্রত্যাদেশ বলিয়া কিছু নাই। … অনুপ্রেরণা বলিয়া যাহা চলিতেছে, তাহা আর কিছুই নয়—যে সংস্কারগুলি পূর্ব হইতেই মনের মধ্যে বাসা বাঁধিয়া আছে, সেগুলির কার্যপরিণত রূপ অর্থাৎ ফল। একদিন সচকিতে আসে এই ফল! তাঁহাদের অতীত কর্মই ইহার কারণ।
সেখানেও দেখিবে ধ্যানের শক্তি—চিন্তার গভীরতা। ইঁহারা নিজ নিজ আত্মাকে মন্থন করেন। মহান্‌ সত্যসমূহ উপরিভাগে আসিয়া প্রতিভাত হয়। অতএব ধ্যানাভ্যাসই জ্ঞানলাভের বিজ্ঞানসম্মত পন্থা। ধ্যানের শক্তি ব্যতীত জ্ঞান হয় না। ধ্যানশক্তির প্রয়োগে অজ্ঞান, কুসংস্কার ইত্যাদি হইতে আমরা সাময়িকভাবে মুক্ত হইতে পারি, ইহার বেশী নয়। মনে কর, এক ব্যক্তি আমাকে বলিয়াছে যে, এই বিষ পান করিলে মৃত্যু হইবে এবং আর এক ব্যক্তি রাত্রে আসিয়া বলিল, ‘যাও, বিষ পান কর!’ এবং বিষ খাইয়াও আমার মৃত্যু হইল না (যাহা ঘটিল তাহা এই)—ধ্যানের ফলে বিষ ও আমার নিজের মধ্যে একত্ববোধ হইতে সাময়িকভাবে আমার মন বিচ্ছিন্ন হইয়াছিল। অপর পক্ষে সাধারণভাবে বিষ পান করিতে গেলে মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী ছিল।
যদি আমি কারণ জানি এবং বৈজ্ঞানিক উপায়ে আমাকে ধ্যানের অবস্থায় উন্নীত করি, তবে যে-কোন লোককেই আমি বাঁচাইতে পারি। এই কথা (যোগ)-গ্রন্থে লিপিবদ্ধ আছে, কিন্তু ইহা কতখানি নির্ভুল, তাহার বিচার তোমরাই করিও।
লোকে আমাকে জিজ্ঞাসা করেঃ তোমরা ভারতবাসীরা এ-সব জয় কর না কেন? অন্যান্য জাতি অপেক্ষা তোমরা শ্রেষ্ঠ বলিয়া সর্বদা দাবী কর। তোমরা যোগাভ্যাস কর এবং অন্য কাহারও অপেক্ষা দ্রুত অভ্যাস কর। তোমরা যোগ্যতর। ইহা কার্যে পরিণত কর! তোমরা যদি মহান্‌ জাতি হইয়া থাক, তোমাদের যোগপদ্ধতিও মহান্ হওয়া উচিত। সব দেবতাকে বিদায় দিতে হইবে। বড় বড় দার্শনিকদের চিন্তাধারা গ্রহণ করিবার সঙ্গে সঙ্গে দেবতাদের ঘুমাইতে দাও। তোমরাও বিশ্বের অন্য সকলের মত কুসংস্কারাচ্ছন্ন শিশু মাত্র। তোমাদের সব কিছু দাবী নিষ্ফল। তোমাদের যদি সত্যি দাবী থাকে, সাহসের সহিত দাঁড়াও, এবং স্বর্গ বলিতে যাহা কিছু—সব তোমাদের। কস্তুরীমৃগ তাহার অন্তর্নিহিত সৌরভ লইয়া আছে, এবং সে জানে না—কোথা হইতে সৌরভ আসিতেছে। বহুদিন পর সে সেই সৌরভ নিজের মধ্যেই খুঁজিয়া পায়। এ-সব দেবতা ও অসুর মানুষের মধ্যে আছে। যুক্তি, শিক্ষা ও সংস্কৃতির শক্তিতে জান যে, তোমার মধ্যেই সব আছে। দেবতা ও কুসংস্কারের আর প্রয়োজন নাই। তোমরা যুক্তিবাদী, যোগী, যথার্থ আধ্যাত্মিকতা-সম্পন্ন হইতে চাও।
(আমার উত্তর এইঃ তোমাদের নিকট) সব-কিছুই জড়। সিংহাসনে সমাসীন ঈশ্বর অপেক্ষা বেশী জড় আর কি হইতে পারে? মূর্তিপূজক গরীব বেচারীকে তো তোমরা ঘৃণা করিতেছ। তার চেয়ে তোমরা বড় নও। আর ধনের পূজারী তোমরাই বা কী! মূর্তিপূজক তাহার দৃষ্টির গোচরীভূত কোন বিশেষ কিছুকেই দেবতাজ্ঞানে পূজা করিয়া থাকে, কিন্তু তোমরা তো সেটুকুও কর না। আত্মার অথবা বুদ্ধিগ্রাহ্য কোন কিছুর উপাসনা তোমরা কর না! তোমাদের কেবল বাক্যাড়ম্বর। ‘ঈশ্বর চৈতন্যস্বরূপ!’ ঈশ্বর চৈতন্যস্বরূপই। প্রকৃত ভাব ও বিশ্বাস লইয়া ঈশ্বরের উপাসনা করিতে হইবে। চৈতন্য কোথায় থাকেন? গাছে? মেঘে? ‘আমাদের ঈশ্বর’—এই কথার অর্থ কি? তুমিই তো চৈতন্য। এই মৌলিক বিশ্বাসটিকে কখনই ত্যাগ করিও না। আমি চৈতন্যস্বরূপ। যোগের সমস্ত কৌশল এবং ধ্যানপ্রণালী আত্মার মধ্যে ঈশ্বরকে উপলব্ধি করিবার জন্য।
এখনই কেন এই সমস্ত বলিতেছি? যে পর্যন্ত না তুমি (ঈশ্বরের) স্থান নির্দেশ করিতে পারিবে, এ-বিষয় কিছুই বলিতে পার না। (তাঁহার) প্রকৃত স্থান ব্যতীত স্বর্গে এবং মর্ত্যের সর্বত্র তুমি তাঁহার অবস্থিতি নির্ণয় করিতেছ। আমি চেতন প্রাণী, অতএব সমস্ত চেতনার সারভূত চেতনা আমার আত্মাতে অবশ্যই থাকিবে। যাহারা ভাবে ঐ চেতনা অন্য কোথাও আছে, তাহারা মূর্খ। অতএব আমার চেতনাকে এই স্বর্গেই অন্বেষণ করিতে হইবে। অনাদিকাল হইতে যেখানে যত স্বর্গ আছে, সে-সব আমারই মধ্যে। এমন অনেক যোগী ঋষি আছেন, যাঁহারা এই তত্ত্ব জানিয়া ‘আবৃত্তচক্ষু’ হন এবং নিজেদের আত্মার সমস্ত চেতনার চেতনাকে দর্শন করেন। ইহাই ধ্যানের পরিধি। ঈশ্বর ও তোমার নিজ আত্মা সম্বন্ধে প্রকৃত সত্য আবিষ্কার কর এবং এইরূপে মুক্ত হও।
সকলেই জীবনের পিছু পিছু ছুটিয়া চলিয়াছে, শেষে আমরা দেখি—ইহা মূর্খতামাত্র। জীবন অপেক্ষা আরও মহত্তর কিছু আছে। পাঞ্চভৌতিক (এই জীবন) নিকৃষ্টতর। কেন আমি বাঁচিবার আশায় ছুটিতে যাইব? জীবন অপেক্ষা আমার স্থান যে অনেক উচ্চে। বাঁচিয়া থাকাই সর্বদা দাসত্ব। আমরা সর্বদাই (অজ্ঞানের সহিত নিজেদের) মিশাইয়া ফেলিতেছি …। সবই দাসত্বের অবিচ্ছিন্ন শৃঙ্খল।
তুমি যে কিছু লাভ কর, সে কেবল নিজের দ্বারাই, কেহ অপরকে শিখাইতে পারে না। অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়া (আমরা শিক্ষা করি) … ঐ যে যুবকটি—উহাকে কখনও বিশ্বাস করাইতে পারিবে না যে, জীবনে বিপদ-আপদ আছে। আবার বৃদ্ধকে বুঝাইতে পারিবে না যে, জীবন বিপত্তিহীন, মসৃণ। বৃদ্ধ অনেক দুঃখকষ্টের অভিজ্ঞতা লাভ করিয়াছেন। ইহাই পার্থক্য।
ধ্যানের শক্তিদ্বারা এ-সবই ক্রমে ক্রমে আমাদের বশে আনিতে হইবে। আমরা দার্শনিক দৃষ্টিতে দেখিয়াছি যে, আত্মা মন ভূত (জড় পদার্থ) প্রভৃতি নানা বৈচিত্র্যের (বাস্তব সত্তা কিছু নাই)। … যাহা আছে, তাহা ‘একমেবাদ্বিতীয়ম্’। বহু কিছু থাকিতে পারে না। জ্ঞান এবং বিজ্ঞানের অর্থ ইহাই। অজ্ঞানের জন্যই বহু দেখি। জ্ঞানে একত্বের উপলব্ধি …। বহুকে একে পরিণত করাই বিজ্ঞান …। সমগ্র বিশ্বের একত্ব প্রমাণিত হইয়াছে। এই বিজ্ঞানের নাম বেদান্ত-বিদ্যা। সমগ্র জগৎ এক। আপাত প্রতীয়মান বৈচিত্র্যের মধ্যে সেই ‘এক’ অনুস্যূত হইয়া রহিয়াছে।
আমাদের পক্ষে এখন এই-সকল বৈচিত্র্য রহিয়াছে, আমরা এগুলি দেখিতেছি—অর্থাৎ এগুলি আমরা বলি পঞ্চভূত—ক্ষিতি, অপ্, তেজ, মরুৎ ও ব্যোম্ (পাঁচটি মৌলিক পদার্থ)। ইহার পরে রহিয়াছে মনোময় সত্তা, আর আধ্যাত্মিক সত্তা তাহারও পরে। আত্মা এক, মন অন্য, আকাশ অন্য একটি কিছু ইত্যাদি—এরূপ কিন্তু নয়। এই-সকল বৈচিত্র্যের মধ্যে একই সত্তা প্রতীয়মান হইতেছে; ফিরিয়া গেলে কঠিন অবশ্যই তরলে পরিণত হইবে। যেভাবে মৌলিক পদার্থগুলির ক্রমবিকাশ হইয়াছিল, সেভাবেই আবার তাহাদের ক্রমসঙ্কোচ হইবে। কঠিন পদার্থগুলি তরলাকার ধারণ করিবে, তরল ক্রমে ক্রমে আকাশে পরিণত হইবে। নিখিল জগতের ইহাই কল্পনা—এবং ইহা সর্বজনীন। বাহিরের এই জগৎ এবং সর্বজনীন আত্মা, মন, আকাশ, মরুৎ, তেজ, অপ্ ও ক্ষিতি আছে। মন সম্বন্ধেও একই কথা। ক্ষুদ্র জগতে বা অন্তর্জগতে ‘আমি’ ঠিক ঐ এক। আমিই আত্মা, আমিই মন। আমিই আকাশ, বায়ু, তরল ও কঠিন পদার্থ। আমার লক্ষ্য আমার আত্মিক সত্তায় প্রত্যাবর্তন। একটি ক্ষুদ্র জীবনে ‘মানুষকে’ সমগ্র বিশ্বের জীবন যাপন করিতে হইবে। এরূপে মানুষ এ-জন্মেই মুক্ত হইতে পারে। তাহার নিজের সংক্ষিপ্ত জীবৎকালেই সে বিশ্বজীবন অতিবাহিত করিবার ক্ষমতা লাভ করিবে।
আমরা সকলেই সংগ্রাম করি। … যদি আমরা পরম সত্যে পৌঁছিতে না পারি, তবে অন্ততঃ এমন স্থানেও উপনীত হইব, যেখানে এখানকার অপেক্ষা উন্নততর অবস্থাতেই থাকিব। এই অভ্যাসেরই নাম ধ্যান। (সব কিছুকে সেই চরম সত্য—আত্মাতে পর্যবসিত করা।) কঠিন দ্রবীভূত হইয়া তরলে, তরল বাষ্পে, বাষ্প ব্যোম্ বা আকাশে আর আকাশ মনে রূপান্তরিত হয়। তারপর মনও গলিয়া যাইবে। শুধু থাকিবে আত্মা—সবই আত্মা।
যোগীদের মধ্যে কেহ কেহ দাবী করেন যে, এই শরীর তরল বাষ্প ইত্যাদিতে পরিণত হইবে। তুমি শরীর দ্বারা যাহা খুশী করিতে পারিবে—ইহাকে ছোট করিতে পার, এমন কি বাষ্পেও পরিণত করিতে পার, এই দেওয়ালের মধ্য দিয়া যাতায়াতও সম্ভব হইতে পারে—এই রকম তাঁহারা দাবী করেন। আমার অবশ্য তাহা জানা নাই। আমি কখনও কাহাকেও এরূপ করিতে দেখি নাই। কিন্তু যোগশাস্ত্রে এই-সব কথা আছে। যোগশাস্ত্রগুলিকে অবিশ্বাস করিবার কোন হেতু নাই।
হয়তো আমাদের মধ্যে কেহ কেহ এই জীবনে ইহা সাধন করিতে সমর্থ হইবেন। আমাদের পূর্বকৃত কর্মের ফলে বিদ্যুৎপ্রভার ন্যায় ইহা প্রতিভাত হয়। কে জানে এখানেই হয়তো কোন প্রাচীন যোগী রহিয়াছেন, যাঁহার মধ্যে সাধনা সম্পূর্ণ করিবার সামান্যই একটু বাকী। অভ্যাস!
একটি চিন্তাধারার মাধ্যমে ধ্যানে পৌঁছিতে হয়। ভূতপঞ্চকের শুদ্ধীকরণ-প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়া যাইতে হয়—এক-একটিকে অপরটির মধ্যে দ্রবীভূত করিয়া স্থূল হইতে পরবর্তী সূক্ষ্মে, সূক্ষ্মতরে, তাহাও আবার মনে, মনকে পরিশেষে আত্মায় মিশাইয়া দিতে হয়। তখন তোমরাই আত্মস্বরূপ।*
জীবাত্মা সদামুক্ত, সর্বশক্তিমান্, সর্বজ্ঞ। অবশ্য জীবাত্মা ঈশ্বরাধীন। ঈশ্বর অনেক হইতে পারেন না। এই মুক্তাত্মাগণ বিপুল শক্তির আধার, প্রায় সর্বশক্তিমান্, (কিন্তু) কেহই ঈশ্বরতুল্য শক্তিমান্ হইতে পারেন না। যদি কোন মুক্ত পুরুষ বলেন, ‘আমি এই গ্রহটিকে কক্ষচ্যুত করিয়া ইহাকে এই পথ দিয়া পরিভ্রমণ করিতে বাধ্য করিব’ এবং আর একজন মুক্তাত্মা যদি বলেন, ‘আমি গ্রহটিকে এই পথে নয়, ঐ পথে চালাইব’ (তবে বিশৃঙ্খলারই সৃষ্টি হইবে)।
তোমরা যেন এই ভুল করিও না। আমি যে ইংরেজীতে বলি, ‘আমি ঈশ্বর (God)’, তাহার কারণ ইহা অপেক্ষা আর কোন যোগ্যতর শব্দ নাই। সংস্কৃতে ‘ঈশ্বর’ মানে সচ্চিদানন্দ, জ্ঞান—স্বয়ংপ্রকাশ অনন্ত চৈতন্য। ঈশ্বর অর্থে কোন পরিচ্ছন্ন ব্যক্তিবিশেষ নয়। তিনি নৈর্ব্যক্তিক ভূমা। …
আমি কখনও রাম নই, ঈশ্বরের (ঈশ্বরের সাকার ভাবের) সহিত কখনও এক নই, কিন্তু আমি (ব্রহ্মের সহিত—নৈর্ব্যক্তিক সর্বত্র-বিরাজমান সত্তার সহিত) এক। এখানে একতাল কাদা রহিয়াছে। এই কাদা দিয়া আমি একটি ছোট ইঁদুর তৈরী করিলাম আর তুমি একটি ক্ষুদ্রকায় হাতী প্রস্তুত করিলে। দুই-ই কাদার। দুইটিকেই ভাঙিয়া ফেল। তাহারা মূলতঃ এক—তাই একই মৃত্তিকায় পরিণত হইল। ‘আমি এবং আমার পিতা এক।’ (কিন্তু মাটির ইঁদুর আর মাটির হাতী কখনই এক হইতে পারে না।)
কোন জায়গায় আমাকে থামিতে হয়, আমার জ্ঞান অল্প। তুমি হয়তো আমার চেয়ে কিছু বেশী জ্ঞানী, তুমিও একস্থানে থামিয়া যাও। আবার এক আত্মা আছেন, যিনি সর্বশ্রেষ্ঠ। তিনিই ঈশ্বর, যোগাধীশ (স্রষ্টারূপে সগুণ ঈশ্বর)। তখন তিনি সর্বশক্তিমান্ ‘ব্যক্তি’। সকল জীবের হৃদয়ে তিনি বাস করেন। তাঁহার শরীর নাই—শরীরের প্রয়োজন হয় না। ধ্যানের অভ্যাস প্রভৃতি দ্বারা যাহা কিছু আয়ত্ত করিতে পার, যোগীন্দ্র ঈশ্বরের ধ্যান করিয়াও তাহা লভ্য। একই বস্তু আবার কোন মহাপুরুষকে, অথবা জীবনের ঐকতানকে ধ্যান করিয়াও লাভ করা যায়। এগুলিকে বিষয়গত ধ্যান বলে। সুতরাং এইভাবে কয়েকটি বাহ্য বা বিষয়গত বস্তু লইয়া ধ্যান আরম্ভ করিতে হয়। বস্তুগুলি বাহিরেও হইতে পারে, ভিতরেও হইতে পারে। যদি তুমি একটি দীর্ঘ বাক্য গ্রহণ কর, তবে তাহা মোটেই ধ্যান করিতে পারিবে না। ধ্যান মানে পুনঃপুনঃ চিন্তা করিয়া মনকে ধ্যেয় বস্তুতে নিবিষ্ট করার চেষ্টা। মন সকল চিন্তাতরঙ্গ থামাইয়া দেয় এবং জগৎও থাকে না। জ্ঞানের পরিধি বিস্তৃত হয়। প্রতিবারেই ধ্যানের দ্বারা তোমার শক্তি বৃদ্ধি হইবে। … আরও একটু বেশী কঠোর পরিশ্রম কর—ধ্যান গভীরতর হইবে। তখন তোমার শরীরের বা অন্য কিছুর বোধ থাকিবে না। এইভাবে একঘণ্টা ধ্যানমগ্ন থাকার পর বাহ্য অবস্থায় ফিরিয়া আসিলে তোমার মনে হইবে যে, ঐ সময়টুকুতে তুমি জীবনে সর্বাপেক্ষা সুন্দর শান্তি উপভোগ করিয়াছ। ধ্যানই তোমার শরীরযন্ত্রটিকে বিশ্রাম দিবার একমাত্র উপায়। গভীরতম নিদ্রাতেও ঐরূপ বিশ্রাম পাইতে পার না। গভীরতম নিদ্রাতেও মন লাফাইতে থাকে। কিন্তু (ধ্যানের) ঐ কয়েকটি মিনিটে তোমার মস্তিষ্কের ক্রিয়া প্রায় স্তব্ধ হইয়া যায়। শুধু একটু প্রাণশক্তি মাত্র থাকে। শরীরের জ্ঞান থাকে না। তোমাকে কাটিয়া টুকরা টুকরা করিয়া ফেলিলেও তুমি টের পাইবে না। ধ্যানে এতই আনন্দ পাইবে যে, তুমি অত্যন্ত হালকা বোধ করিবে। ধ্যানে আমরা এইরূপ পূর্ণ বিশ্রাম লাভ করিয়া থাকি।
তারপর বিভিন্ন বস্তুর উপরে ধ্যান। মেরুমজ্জার বিভিন্ন কেন্দ্রে ধ্যানের প্রণালী আছে। (যোগিগণের মতে মেরুদণ্ডের মধ্যে ইড়া ও পিঙ্গলা নামক দুইটি স্নায়বীয় শক্তিপ্রবাহ বর্তমান। অন্তর্মুখী ও বহির্মুখী শক্তিপ্রবাহ এই দুই প্রধান পথে গমনাগমন করে।) শূন্যনালী (যাহাকে বলে সুষুম্না) মেরুদণ্ডের মধ্য দিয়া চলিয়া গিয়াছে। যোগীরা বলেন, এই সুষুম্না-পথ সাধারণতঃ রুদ্ধ থাকে, কিন্তু ধ্যানাভ্যাসের ফলে ইহা উন্মুক্ত হয়, (স্নায়বীয়) প্রাণশক্তিপ্রবাহকে (মেরুদণ্ডের নীচে) চালাইয়া দিতে পারিলেই কুণ্ডলিনী জাগরিত হয়। জগৎ তখন ভিন্নরূপ ধারণ করে। … (এইরূপে ঐশ্বরিক জ্ঞান, অতীন্দ্রিয় অনুভূতি ও আত্মজ্ঞান লাভ করিবার একমাত্র উপায় হইতেছে কুণ্ডলিনীর জাগরণ।). সহস্র সহস্র দেবতা তোমার চারিদিকে দাঁড়াইয়া রহিয়াছেন। তুমি তাঁহাদিগকে দেখিতে পাইতেছ না, কারণ তোমার জগৎ ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য। আমরা কেবল এই বাহিরটাই দেখিতে পারি; ইহাকে বলা যাক ‘ক’। আমাদের মানসিক অবস্থা অনুযায়ী আমরা সেই ‘ক’-কে দেখি বা উপলব্ধি করি। বাহিরে অবস্থিত ঐ গাছটিকে ধরা যাক। একটি চোর আসিল, সে ঐ মুড়া গাছটিকে কি ভাবিবে? সে দেখিবে—একজন পাহারাওয়ালা দাঁড়াইয়া আছে। শিশু উহাকে মনে করিল—একটা প্রকাণ্ড ভূত। একটি যুবক তাহার প্রেমিকার জন্য অপেক্ষা করিতেছিল; সে কি দেখিল? নিশ্চয়ই তাহার প্রিয়তমাকে। কিন্তু এই স্থাণু বা মুড়া গাছটির তো কোন পরিবর্তন হয় নাই। ইহা যেরূপ ছিল, সেইরূপই রহিল। স্বয়ং ঈশ্বরই কেবল আছেন, আমরাই আমাদের নির্বুদ্ধিতার জন্য তাঁহাকে মানুষ, ধূলি, বোবা, দুঃখী ইত্যাদি-রূপে দেখিয়া থাকি।
যাহারা একইভাবে গঠিত, তাহারা স্বভাবতঃ একই শ্রেণীভুক্ত হয় এবং একই জগতে বাস করে। অন্যভাবে বলিলে বলা যায়—তোমরা একই স্থানে বাস কর। সমস্ত স্বর্গ এবং সমস্ত নরক এখানেই। উদাহরণস্বরূপ বলা যাইতে পারে—কতকগুলি বড় বৃত্তের আকারে সমতল ক্ষেত্রসমূহ যেন পরস্পর কয়েকটি বিন্দুতে ছেদ করিয়াছে … । এই সমতল ভূমির একটি বৃত্তে অবস্থিত আমরা আর একটি সমতলের (বৃত্তকে) কোন একটি বিন্দুতে স্পর্শ করিতে পারি। মন যদি কেন্দ্রে পৌঁছে, তবে সমস্ত স্তরেরই তোমার জ্ঞান হইতে থাকিবে। ধ্যানের সময় কখনও কখনও তুমি যদি অন্য ভূমি স্পর্শ কর, তখন অন্য জগতের প্রাণী, অশরীরী আত্মা এবং আরও কত কিছুর সংস্পর্শে আসিতে পার।
ধ্যানের শক্তি দ্বারাই এই-সব লোকে যাইতে পার। এই শক্তি আমাদের ইন্দ্রিয়গুলিকে পরিবর্তিত এবং পরিমার্জিত করে। যদি তুমি পাঁচদিন ঠিক ঠিক ধ্যান অভ্যাস কর, এই (জ্ঞান) কেন্দ্রগুলির ভিতর হইতে একপ্রকার ‘সংবেদনা’ অনুভব করিবে—তোমার শ্রবণশক্তি সূক্ষ্মতর হইতেছে। … (জ্ঞানেন্দ্রিয়গুলি যতই মার্জিত হইবে, অনুভূতিও ততই সূক্ষ্ম হইবে। তখন অধ্যাত্মজগৎ খুলিয়া যাইবে।) এইজন্য ভারতীয় দেবতাগণের তিনটি চক্ষু কল্পনা করা হইয়াছে। তৃতীয় বা জ্ঞানচক্ষু উন্মীলিত হইলে বিবিধ আধ্যাত্মিক দর্শন উপস্থিত হয়।
কুণ্ডলিনী শক্তি মেরুমজ্জার মধ্যস্থিত এক কেন্দ্র হইতে কেন্দ্রান্তরে যতই উঠিতে থাকে, ততই ইন্দ্রিয়গুলির পরিবর্তন সাধিত হয় এবং জগৎ ভিন্নরূপে প্রতীত হইতে আরম্ভ করে। পৃথিবী তখন স্বর্গে পরিণত হয়। তোমার কথা বন্ধ হইয়া যায়। তারপর কুণ্ডলিনী অধস্তন কেন্দ্রগুলিতে নামিলে তুমি আবার মানবীয় ভূমিতে আসিয়া পড়। সমস্ত কেন্দ্র অতিক্রম করিয়া কুণ্ডলিনী যখন মস্তিষ্কে সহস্রারে পৌঁছিবে, তখন সমগ্র দৃশ্য জগৎ (তোমার অনুভূতিতে) বিলীন হয় এবং এক সত্তা ব্যতীত কিছুই অনুভব কর না। তখন তুমিই পরমাত্মা; সমুদয় স্বর্গ তাঁহা হইতেই সৃষ্টি করিতেছ; সমস্ত জগৎও তাঁহা হইতেই রচনা করিতেছ। তিনিই একমাত্র সত্তা; তিনি ছাড়া আর কিছুই নাই।  তান্তিক গুরু জি ..01757786808/