সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। হে আল্লাহ! হে মানুষের প্রতিপালক! আপনি কষ্ট দূর করে দিন ও আরোগ্য দান করুন। (যেহেতু) আপনিই রোগ আরোগ্যকারী।
আপনার আরোগ্য দান হচ্ছে প্রকৃত আরোগ্য দান। আপনি এমনভাবে রোগ নিরাময় করে দিন যেন তা রোগকে নির্মূল করে দেয়।
জাদুটোনা কিংবা কুফরি থেকে বাঁচতে আমাদের যেমন সঠিক আমল করা জরুরি। তেমনি আ’ক্রা’ন্ত হয়ে গেলে তা থেকে বাঁচতে সঠিক তদবির গ্রহণ করাও জরুরি।
যে আমল করবেন- জাদুটোনা কিংবা কুফরির মাধ্যমে করা তদবিরে মানুষ মা রা ত্ম ক অসুস্থ হয়ে যায়। তা থেকে বেঁচে থাকতে রয়েছে আমল ও দোয়া। এ জাদুটোনা কিংবা মানুষ এবং বদ-জ্বীনের কু-প্রভাবে হয়ে থাকে।
জাদুটোনা কিংবা কুফরির কু-প্রভাব থেকে বাঁচতে যেমন সঠিক আমল করা জরুরি। তেমনি আ’ক্রা’ন্ত হয়ে গেলে তা থেকে বাঁ চ তে বিশুদ্ধ তদবির গ্রহণ করাও জরুরি। সংক্ষেপে কিছু আমল, উপায় ও পদ্ধতি তুলে ধরা হলো-
জাদুটোনার ধরণ বুঝে পদক্ষেপ গ্রহণ-
মানুষের ক্ষ.. তি কী ধরণে জাদুটোনা করা হয়েছে প্রথমেই সে সম্পর্কে জেনে নিতে হবে। আর তা জানতে সক্ষম হলে জাদুর জিনিসগুলো ধ্বং.. সের মাধ্যমেই তা থেকে মুক্ত হওয়া যায়।
যেমন- কোনো নির্দিষ্ট স্থানে কিংবা নির্দিষ্ট কোনো জিনিসের মাধ্যমে হতে পারে তা মানুষের চুল, ব্যবহৃত চিরুনি, পানি পানের গ্লাস বা মগ কিংবা অন্য কোনো ব্যবহৃত জিনিস। তবে সে সব জিনিস আ.. গু ণে কিংবা পানি দ্বারা নষ্ট করে দিতে হবে।
জাদুকার চিহ্নিত করা-
কোন ব্যক্তির দ্বারা ক্ষতিকর জাদুটোনা করা হয়েছে, সম্ভব হলে তা জেনে নেয়া। জাদুটোনাকারী কে? তা জানতে পারলে সে ব্যক্তিকে তা নষ্ট করতে বাধ্য করা। জাদুটোনাকারী ব্যক্তিকে তা নষ্ট করার পর তাওবা করানো। ইসলামে জাদুটোনাকারীকে হ.. ত্যা র নির্দেশ এসেছে। মুসলিম (ইসলামি শাসন প্রক্রিয়ায়) শাসকের ওপর দায়িত্ব হলো জাদুকারীকে তাওবার আহ্বান না করেই হ.. ত্যা করা।
হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা হাদিসে পাকে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘জাদুকরের শাস্তি হচ্ছে ত লো য়া রের আ ঘা তে তার গর্দান ফে লে দেয়া।
’ফলে হজরত হাফসা রাদিয়াল্লাহু আনহা যখন জানতে পারলেন যে, তাঁর এক বাদী জাদুটোনা করে, তখণ তাকে হ.. ত্যা করা হয়।
ঝাঁড়-ফুঁকের মাধ্যমে জাদুটোনা নষ্ট করা-
জাদু নষ্ট করার ক্ষেত্রে ঝাড়ফুঁকের রয়েছে বড় ধরনের প্রভাব। আর তাহলো এমন- ‘জাদুটোনায় আ’ক্রা’ন্ত ব্যক্তির ওপর অথবা কোনো একটি পাত্রের পানিতে আয়াতুল কুরসি অথবা সুরা আরাফ, সুরা ইউনুস, সুরা ত্বহা এর যাদু বিষয়ক আয়াতগুলো পড়ে দম করা এবং তা পান করা।
– হজরত ওয়াহাব রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, যে ব্যক্তি জাদু-টোনার শিকার হয়, তাঁকে জাদুর প্রভাব থেকে মুক্ত করতে হলে নিম্নোক্ত আমলটি করতে হবে। আর তা হলো- কুলের সাতটি পাতা পাটায় বেটে পানিতে মিশাতে হবে। অতঃপর আয়াতুল কুরসি পড়ে ওই পাটা পাতার ওপর ফু দিতে হবে। সেগুলো পানির সঙ্গে মিশাতে হবে। তা থেকে জাদুকৃত ব্যক্তিকে তিন ঢোক পানি পান করাতে হবে।
অবশিষ্ট পানি দিয়ে গোসল করাতে হবে। ইন শা আল্লাহ এ আমলের কারো প্রতি জাদু ক্রিয়া হয়ে থাকে; তবে তা নষ্ট হয়ে যাবে।
জাদুটোনা থেকে বাঁচার আমল-
– নিয়মিত আয়াতুল কুরসি, সুরা কাফিরুন, সুরা ইখলাস, সুরা নাস ও সুরা ফালাক পড়া।– নিয়মিত এ দোয়াটি পড়া- উচ্চারণ, আল্লাহুম্মা রাব্বান নাস! আজহিবিল বাস। ওয়াশফি আনতাশ শাফি। লা শিফাআ ইল্লা শিফাউকা, শিফাআন লা ইয়ুগাদিরু সাকামা।’
অর্থ : হে আল্লাহ, হে মানুষের প্রতিপালক! আপনি কষ্ট দূর করে দিন ও সুস্থতা দান করুন। (কেননা) আপনি রোগ থেকে সুস্থতা দানকারী। আপনার সুস্থতা দানই হচ্ছে প্রকৃত সুস্থতা দান। আপনি এমনভাবে সুস্থতা দান করুন, যাতে তা রোগকে নির্মূল করে দেয়।’
জিবরিলের দোয়া-
বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্য হজরত জিবরিল আলাইহিস সালাম এ দোয়া পড়ে ঝাঁড়ফুঁক করেছিলেন। জিবরিলের দোয়াটি পড়া- উচ্চারণ : ‘বিসমিল্লাহি আরক্বিকা মিন কুল্লি শাইয়িন ইয়ুজিকা। মিন শাররি কুল্লি নাফসিন আও আইনি হাসিদিন; আল্লাহু ইয়াশফিকা । বিসমিল্লাহি আরক্বিকা।’
অর্থ : আল্লাহর নামে সব কষ্টদায়ক বিষয় থেকে আমি আপনাকে ঝাঁড়ফুঁক করছি। প্রত্যেক আত্মা ও ঈর্ষাপরায়ণ চোখের অনিষ্ট থেকে। আল্লাহ আপনাকে সুস্থতা দান করুন। আল্লাহর নামে আমি আপনাকে ঝাড়ফুঁক করছি।
মহান আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে উল্লেখিত আমল, দোয়া ও উপায়গুলো মেনে চলার মাধ্যমে ক্ষতিকর সব জাদুটোনা থেকে হেফাজত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।
মোবাইল স্ক্রিনের কোরআন কি ওজু ছাড়া পড়া যাবে?
মোবাইলে সফটওয়্যারের মাধ্যমে কোরআন শরিফ সংরক্ষণ করা যায়। এ সফটওয়্যার চালু করলে স্ক্রিনে কোরআন শরিফ দেখা ও পড়া যায়। প্রশ্ন হলো, মোবাইলের স্ক্রিনে দৃশ্যমান কোরআন শরিফ ওজু ছাড়া স্পর্শ করা যাবে কি-না ?
উত্তর: বিষয়টি মতভেদপূর্ণ। আলেমদের কারো কারো মতে, যে বস্তুতে কোরআন শরিফ স্থায়ীভাবে লেখা থাকে, তা ওজু ছাড়া স্পর্শ করা জায়েজ নয়। যেমন কাগজে ছাপা হওয়া কোরআন। কিন্তু মোবাইলের স্ক্রিনে দৃশ্যমান কোরআন শরিফ স্থায়ী নয়। কিছু আলোকরশ্মির মাধ্যমে তা দৃশ্যমান হয়। সুতরাং তা ওজু ছাড়া স্পর্শ করা যাবে।
সমকালীন বিখ্যাত ফকিহ শাইখ আব্দুর রহমান ইবনে নাসের, শাইখ সালেহ ফাওযান প্রমুখ এমনই ফতোয়া দিয়েছেন (দেখুন- আল ইসলাম, সওয়াল-জওয়াব, ফতোয়া নং: ১০৬৯৬৬১)।
এছাড়া মোবাইলের ওপরে গ্লাসের আবরণও থাকে। এ কারণে কেউ কেউ বলেন, তা ওজু ছাড়া স্পর্শ করা যায়।
অন্যদিকে কিছু গবেষক আলেমের মতে, কোরআন মাজিদের যথাযথ মর্যাদা রক্ষার্থে মোবাইলের স্ক্রিনে দৃশ্যমান অংশও বিনা ওজুতে স্পর্শ করা যাবে না। বিষয়টি যেহেতু মতভেদপূর্ণ। তাই স্ক্রিনে দৃশ্যমান কোরআনের আয়াত বিনা ওজুতে স্পর্শ না করাই শ্রেয়।
তান্ত্রিক গুরু আজিজ রহমান