।পরী সাধনা করার সহজ উপায়
তোরে আমি আগেও কয়ছি, এই লাইন থেইক্যা চইলা যা। আমি তরে কিছুই শিখামুনা। নিজের সর্বনাশ করিস না।
- আমার সর্বনাশ আমি নিজেই বুঝমু। আপনে শুধু আমারে মন্ত্রটা দেন। নিয়ম কানুন সব আমি আগেই শিখছি!
- তোরে শিখাইলে তুই সবাইরে কইয়া দিবি। সবার সর্বনাশ করবি রে তুই!
- গুরু, আপনারে কসম দিয়ে কইতাছি, আমি কাউরে কমু না। আপনের কথা না শুনলে তো আপনে আমারে সাথে সাথেই বান মাইরা দিতে পারবেন। আপনার কাছ থেইক্যা পালাইয়া এই দুনিয়ায় যামু কই আমি?
কথা অতিশয় সত্য। কাপালিক মোহনরাজ রক্তলাল চোখে হাশিমের দিকে তাকিয়ে হাশিমের মনের কথাগুলি পড়তে শুরু করল......
এক
নিশুতি রাত। চারদিকে নিঃস্তব্ধ অন্ধকারের হাতছানি। ঘুটঘুটে অন্ধকারে ভিতরেও হাশিম একমনে ঘন জঙ্গলের ভিতরে হেঁটে যাচ্ছে। অনেকদুর হাঁটার পর মাটির ঘরটা চোখে পড়ল হাশিমের। এই ঘরটা ওর বাসা থেকে অনেক দূরে। বহুদিন আগে এটা ব্যবহার করা হতো। প্রথম যেদিন খুঁজে পায় এই ঘরটা, সেদিন দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে হাশিম সাথে সাথেই বুঝে যায়, ঠিক এই রকম একটা ঘরের কথাই বলেছে গুরু। অন্ধকারাচ্ছন্ন, সূর্যের আলো খুব একটা প্রবেশ করে না দিনের বেলা এখানে আর বহুদিন ধরে এই ঘরে কোন মেয়ে বা মহিলার আগমন ঘটেনি, যেটা ও মনপ্রান দিয়ে চেয়েছিল। যথেষ্ঠ সাফসুতর করে গতকালকে ঘরটা কাজে লাগানোর মতো তৈরি করলেও, আজকেই সাধনায় বসবে ও। চান্দ্রমাসের প্রথম রাত আজকে, তার উপর আবার বৃহঃস্পতিবার। ঠিক যেমন রাত ওর দরকার। সাথে আনা সব জিনিসপত্র মেঝেতে নামিয়ে রেখে হাত ঘড়ির দিকে তাকাল হাশিম। রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা।
হাতে সময় বেশি নেই দেখে তাড়াতাড়ি কাজ শুরু করল হাশিম………..
রাত বারটা বাজার সাথে সাথেই ঘরের মাঝখানে নতুন সবুজ একটা ছোট কার্পেট বিছিয়ে দিল প্রথমে। সারাঘরে তীব্র গন্ধের একটা আতর ছিটিয়ে দিয়ে, সারা ঘরে লাল জংলি গোলাপের পাপড়ি ছিটিয়ে দিল। কাপড় পরিবর্তন করা শুরু করল হাশিম। রেশমি কাপড়ের প্রিন্স কোটটা আজকেই দর্জির কাছ থেকে নিয়ে এসেছে ও। রেশমি কাপড় দিয়ে বানানো নতুন কাপড়চোপড় পড়া শেষ হতেই, মাথায় একটা বড় টোপড় দেয়া নতুন পাগরী পড়ল ও। চারটা চার রঙ এর মোমবাতি মন্ত্রপড়া প্যাকেট থেকে বের করে সবুজ কার্পেটের চারপাশে মেঝেতে রেখে জ্বালিয়ে দিয়ে নিরাপত্তার বেষ্টনী দিল হাশিম। আতরটা সারা গায়ে ভালোভাবে মাখিয়ে নিয়ে নিয়ম মতো কার্পেটের উপর চন্দ্রাসন গেড়ে বসল হাশিম। সামনে কার্পেটের উপর ছোট একটা নতুন কাঠের পিড়ির উপর গুরুর দেয়া পিতলের থালাটা রাখল। ব্যাগ থেকে কস্তুরি, মেশক আর গোলাপ জল বের করে মন্ত্র পড়তে পড়তে পিতলের থালার উপর নিয়ম মতো নির্দিষ্ট একটা নকশা বারবার আঁকা শুরু করল হাশিম।
টানা কয়দিন যে সাধনা চলবে হাশিম নিজেও জানে না.....
দুই
টানা তিন রাত্রী সাধনার পর ক্লান্ত হয়ে হাশিম প্রায় ঘুমিয়ে পড়েছে সেই সবুজ কার্পেটের উপর। হঠাৎ ঘরের ভিতর হালকা ধুম করে একটা শব্দ হতেই ঘুমটা ভেঙ্গে গেল ওর। মাত্র কিছুক্ষন আগেই ঘুম এসেছে, তাই হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ায় হাশিম বুঝতে পারছে না কিসের শব্দ হলো! হালকা নীলাভ একটা আলোয় ডুবে আছে যেন ঘরটা। কিছুক্ষণ পর হাশিমের মনে হলো কামিনী ফুলের তীব্র ঘ্রানে পুরো ঘরটা ভরে গেছে! অবাক হয়ে গেল ও, বেশ ভালো করে সারা ঘরেই তীব্র আতর দিয়েছিল ও। কোথায় গেলে সেই আতরের ঘ্রান? দুচোখে লেগে থাকা ঘুমের রেশ চট করে কেটে গেল। ঠিক সেই সময় ঘরের ভেতর শুনতে পেল কংকনের টুংটাং আওয়াজ। হালকা করে মাথা তুলে তাকাতেই দেখল আবছা একটা ছায়া যেন আড়াল করে আছে এক নারীকে। খুব উজ্জল গৌড় বর্ণের শরীর থেকে নীলাভ সাদা আভা বিচ্ছুরিত হচ্ছে, গাঢ় সাদা রংয়ের কাপড় পড়নে, ঘন লাল লম্বা চুলের গোছা সামনে ভারী উঁচু বুকের উপর বিছানো। দুহাতে মোটা মোটা স্বর্ণের বালা, গলায় স্বর্ণের একটা বড় হার ঝুলছে। ব্যাখ্যাহীন একটা ভঙ্গিতে দাড়িয়ে ওর দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি করে হাসছে। অসহ্য সুন্দর সেই শারীরিক গঠন! কোন নারী এতটাই রুপসী হতে পারে সেটা একে না দেখলে হাশিম জানতই না । এ যেন অপার্থিব জগতের কোন সেরা শিল্পী, নিজ হাতে আপন মনে তৈরি করেছে এই নারীকে অকল্পনীয় অসহ্য সৌন্দর্য দিয়ে। চন্দ্রাহতের মতো সেদিকে তাকিয়ে রইল হাশিম। ওর মাথা ঠিক কাজ করছে না, ভুলে গেল এর পরের কি কি কাজ করতে বলেছিল কাপালিক মোহনরাজ। চোখে চোখ রেখে এক পা দুই পা করে আস্তে আস্তে এগিয়ে আসছে সেই নারী ওর দিকে। অল্প একটু দূরে দাঁড়িয়ে কামনারত ভঙ্গিতে বুকের উপর রাখা কাপড় ফেলে দিল। অসম্ভব সুন্দর সেই পীনোন্নত বুকের দিকে তাকিয়ে হাশিম ভুলে গেল মোমবাতি দিয়ে নিরাপত্তায় ঘেরা কার্পেটের কথা। দুই হাত তুলে হাশিমকে কাছে ডাকা সেই কামনার আহবান ও কিছুতেই উপেক্ষা করতে পারল না। ছুটে যেয়ে পাগলের মতো জড়িয়ে ধরল হাশিম ওরই সাধনায় ডেকে আনা প্রেয়সীকে। ওর মাথায় কিভাবে যেন শুধুই একটা চিন্তা ঘুরছে, এর সাথে ওকে যেভাবেই হোক সংগম করতে হবে। একবার দুইটা শরীর মিলিত হতে পারলেই এই পরী সারা জীবন ওর বশীভূত হবে। প্রচন্ড শারীরিক কামনায় এর শরীর থেকে শাড়ি খুলে ফেলল হাশিম। এক পলকের মধ্যেই হাশিমের সব কাপড় ওর গা থেকে একে একে খুলে পড়ে গেল। এই অপরূপা নারীদেহের স্পর্শে হাশিমের সারা শরীরে অকল্পনীয় যৌন উত্তেজনা এসে ভর করল।
পাগলের মতো আদর করতে করতে ওর প্রেয়সীকে নিয়ে হাশিম মেঝেতে শুয়ে পড়ল......
তিন
হাশিমের ঘুম ভাঙ্গল পরের দিন প্রায় দুপুর বেলা। চোখ খুলতেই দেখতে পেল সারা ঘর ভয়ংকর তান্ডবে কে যেন প্রায় সব কিছুই তছনছ করে ফেলেছে! উঠে বসার চেস্টা করতেই টের পেল সারা শরীরে প্রচন্ড ব্যথা। ওর শরীরে কোন কাপড়ই নেই। সবুজ কার্পেটটা প্রচন্ড আক্রোসে কেউ কুচি কুচি করে কেটে ফেলেছে। কাঠের পিড়ি সহ গুরুর দেয়া পিতলের থালাটা নেই। আঁতিপাঁতি করে সারা জায়গায় খুঁজল হাশিম, কিন্তু কোথাও নেই। আর এটা বুঝার সাথে সাথেই ওর সারা শরীরে হীমশীতল ভয়ের একটা স্রোত বয়ে গেল। গুরু যেকোন মূল্যে এটাকে হাতছাড়া না করতে বলেছিল, আর পরী হাজির হবার পর সর্বপ্রথম এর নাম জিজ্ঞেস করতে বলেছিল। কোনটাই করেনি ও। তার মানে ওকে ঠিকই প্রলুব্ধ করে কার্পেট থেকে বের করে নিয়ে এসেছিল। দুইপায়ের মাঝখানে হঠাৎ ব্যথা এসে ভালো করে ওকে বুঝিয়ে দিল গতকাল রাতে কি সর্বনাশ হয়েছে ওর! অনেক কষ্ট করে উঠে দাড়িয়ে গতকালকে পড়ে আসা পুরানো লুঙ্গিটা পড়ল। মাটির ঘরটা থেকে যখন ও বের হয়ে আসল, অদ্ভুত একটা অনুভূতি হলো ওর। সমস্ত শরীরটা কেমন যেন ভারী ভারী লাগছে ওর আর মাথাটা ঝিম ঝিম করে ব্যথা করছে।
কোন রকমে বাসার দিকে রওনা দিল হাশিম.....
চার
পনের দিন পরের কথা। কাপালিক মোহনরাজের সামনে হাশিমের বাবা বসে আছে। খুব মনোযোগ দিয়ে হাশিমের বাসায় কি কি উপদ্রব শুরু হয়েছে সেটা শুনছে কাপালিক। হাশিমের বাবা বলা শুরু করল-
- বাড়ীর উপর গত এক সপ্তাহ ধরে যন্ত্রনাদায়ক আযাব শুরু হয়েছে। দিন রাতের কোন ঠিক নেই, হঠাৎ করে বাড়ীর ছাদের উপর শুরু হয় অনেক অনেক লোকের হাঁটাচলা। ভয়ে তখন কেউ ঘর থেকে আর বাইরে বের হই না। মনে হয় যেন ঘরের ছাদ এক্ষুনি ভেঙ্গে নীচে পড়বে। হঠাৎ ছাদের উপর ধাম ধাম করে একটানা পাথরের বৃষ্টি হতে থাকে অথচ বৃষ্টি শেষ হলে বাইরে যেয়ে দেখবেন একটা পাথরও নেই কোথাও! বাড়ীতে সবাই যে যার কাজে ব্যস্ত, হঠাৎ দেখা গেল বাসার চেয়ার টেবিল ঘরের ভিতরে শুন্যের উপর ভাসছে!
হাশিমের কি অবস্থা জানতে চাইল কাপালিক-
- ওকে একটা আলাদা ঘরের মধ্যে দুই হাত খাটের সাথে বেঁধে শুইয়ে রেখেছি আর দরজায় তালা মেরে রেখছি।
- কেন? কি করে ও?
- হঠাৎ করেই খাট থেকে উঠে শুন্যে ভাসতে ভাসতে ঘর থেকে বের হয়ে যায়। একবার ভুলে দরজায় তালা দেয়া ছিল না রাতে, পরের দিন উঠানের বড় আমগাছের মগডালে পাইছি। অজ্ঞান হয়ে ছিল। সারাক্ষন অদ্ভুত এক ভাষায় কথা বলে, তার আমরা কিছুই বুঝি না। কোন কিছু খায়না। কিছু খেতে বললে হাসে আর বলে কোন হুর পরী নাকি এসে বেহেস্তি খানা খাইয়ে দিয়ে গেছে, পেট ভরা। আর সারারাত ঘরের মধ্য নির্লজ্জের মতো আওয়াজ করে আকাম কুকাম করে। ওর এই বেহায়া চিল্লাচিল্লির জন্য কাউরে মুখ দেখাতে পারি না।
- কার সাথে করে? ঢুকে কি ভাবে? ঘরে তালা মারা থাকে না?
- জানি না। এই সব করার সময় তালা আর দরজা কোনটাই আমরা খুলতে পারি না। একবার জানলার ফাঁক দিয়ে উঁকি দিছিলাম, খুব সুন্দর মতন একটা মেয়েরে দেখি খাটে বসে হাশিমকে আদর করে কি জানি খাওয়াচ্ছে। হঠাৎ করে আমার দিকে ফিরে তাকাল, চোখগুলি আগুনের মতো জ্বলছে। কি যে ভয় পাইছি! আপনের দুই পা ধরি। আপনে আমার একমাত্র ছেলেরে ঠিক করে দেন। যা টাকাপয়সা লাগে সেটাই দিব। আপনে আমার সাথে এখনই আমার বাসায় চলেন।
- আমার নাম জানলি কেমনে? কে কইছে তোরে?
- হাশিম যেদিন সারা রাত না এসে দুপুরে বাসায় আসল, দেখি সারা শরীর জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে। উঠানেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল। মাথায় পানি ঢালছি বালতির পর বালতি। জ্বর কিছুতেই কমে না। হঠাৎ চোখ খুলে কয়, বাবা, এই সবে কিছু হইব না। তুমি গুরু মোহনরাজ কাপালিকের কাছে যাও। যেয়ে আমার কথা বল।
- কথা শুইনা তো মনে হয় এর উপর খারাপ জিনিসের আছর হইছে! তোর ছেলের তো সর্বনাশ হইছে নিজের দোষে। কত কইরা বারণ করলাম। এইসব পরী সাধনায় যাইস না। এইগুলান তোর মতন বাচ্চা পোলাপানের কাম না। কে শুনে কার কথা?
হাশিমের বাবা কাপালিকের দুই পা জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে আবার যেতে বলল।
-এখন যাইতে পারুম না। প্রস্তুতি লাগব। সন্ধ্যায় যামু। অমাবস্যার তিথি আছে রাইতে। তুই এখন বাসায় যা। হাশিমরে কোনভাবেই ঘর থাইক্যা বাইর করতে দিবি না। এইবার বাইর করতে পারলে একবারে সারা জীবনের লাইগ্যা নিয়া যাইব! যা, আমি না আসা পর্যন্ত আইজকা ভাল মতন পাহারা দে। আর ঐ ঘরে কেউ ঢুকবি না, খবরদার! উঁকিঝুঁকিও মারবি না! যা, তাড়াতাড়ি নিজের ছেলের কাছে যা!
পাঁচ
হাশিমের বাবা চলে যাবার পর মোহনরাজ শরীর বন্ধক দিয়ে মন্ত্র পড়ে সৌরাসন গেড়ে বসল। হাশিমের উপর আসলে কি হয়েছে সেটা আগে জানা দরকার। এটা না জানলে কোন কিছুই করা যাবে না।
দশ মিনিট পর কাপালিক চোখ খুলে অনেকক্ষন পূর্ব দিকে তাকিয়ে রইল। সামনে বসা তিন জন শিষ্য অবাক হয়ে দেখল কাপালিক অস্থির ভঙ্গিতে মাথা নাড়ছে আর বিড়বিড় করে কি যেন পড়ছে। একটু পরে কাপালিক এই তিনজনকেই বিশেষ কয়েকটা জায়গায় গোপন কিছু জিনিসপত্র আনতে পাঠাল। এইগুলি ছাড়া হাশিমের বাসায় যেয়ে কোনই লাভ নেই!
ঠিক দুই ঘন্টা পরে শিষ্যদের আনা সাতটা পুকুরের পানি এক জায়গায় করে পুরানো একটা বটগাছের নীচে সম্পুর্ণ নগ্ন হয়ে পূর্বদিকে ফিরে গোছল করল কাপালিক। গায়ের জল না মুছে নতুন একটা অধোয়া সেলাইছাড়া সাদা ধুতি পড়ে সাত বার সূর্যের দিকে প্রনাম করে শরীর আবার বন্ধক দিয়ে মন্ত্র পড়ে সৌরাসন ভঙ্গিতে আসন গেড়ে বসল। আগামি এক ঘন্টা কোনভাবেই যেন ওকে কেউ বিরক্ত না করে সেটা বলে, পূর্ব দিকে মুখ ফিরিয়ে চোখ বন্ধ করে আবার বিড়বিড় করে মন্ত্র পড়া শুরু করল কাপালিক।
আজকে সন্ধ্যার পর অমাবস্যার রাতে হাশিমের বাসায় ওকে কঠিন এক যজ্ঞ করতে হবে.......
ছয়
কৃষ্ণপক্ষের অমাবস্যার প্রথম রাত। ঘন কালো অন্ধকারে চারপাশের সবকিছু যেন ঢেকে আছে। মোহনরাজ জঙ্গলের ভিতরে মাটির বাসাটার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। সারাশরীর বন্ধক দেয়ার পরও কিছুটা ইতস্তত লাগছে ওর। ডান হাত দিয়ে দরজাটা ধাক্কা দিয়ে খুলে ভিতরে প্রবেশ করল ও। ভাদ্রমাসের তালপাঁকা গরমের সময়েও ঘরের ভিতর নিঃসীম শীতলতা অনুভব করল ও। কিছু একটা ঠিক নেই ভিতরে! ওর অবচেতন মন বলছে মারাত্মক কোন ভুল করেছে হাশিম। হাতের জ্বলন্ত হ্যাজাক বাতি মেঝেতে নামিয়ে স্বয়ং শিবকে স্মরন করে তান্ত্রিক মন্ত্র পড়ে সামনে জোরে ফুঁ দিল ও। তীক্ষ্ম একটা শব্দ ওর চারপাশে উঠছে আর নামছে। বাম হাতের পাত্র থেকে অসুরের যম মা কালীর নামে সদ্য বলি দেয়া পাঠার রক্ত হাশিম যেখানে আসন গেড়ে বসেছিল তার চারিদিকে ছিটিয়ে দিয়ে চন্দ্রকে স্মরণ করে মন্ত্র পড়তে পড়তে চন্দ্রাসনে বসল ও। দুই হাতের দুই কনিষ্ঠ আঙ্গুল মাথার দুই পাশে চেপে ধরে চোখ বন্ধ করল মোহনরাজ। সেদিন রাতে কি কি ঘটেছিল সব এক এক করে ভেসে উঠল ওর চোখের সামনে। সংগমের দৃশ্য চোখের সামনে শুরু হতেই আচমকা অসহনীয় ব্যথায় চিৎকার দিয়ে উঠল ও। এই দৃশ্য ওকে কিছুতেই দেখতে দেয়া হবে না, কিন্তু সেই এক মুহূর্তের লহমায় হাশিমের আহবান করা পরীকে এর আসল রূপে দেখতে পেয়েছে ও। সমস্ত শরীর কাটা দিয়ে উঠল মোহনরাজের।
- হাশিম রে, তুই কি সর্বনাশ করেছিস? কাকে ডেকে এনেছিস তুই?
২য় পর্ব কালকে প্রকাশিত হবে...........
পাদটীকাঃ জ্বীনের মানুষের ওপর ভর/আশ্রয় গ্রহন করাকে সাধারনভাবে ‘আছর' বলে। এটা এই বিষয়ে প্রচলিত শব্দ। এটি এমন একটি অবস্থা যখন মানুষের নিজের ওপর কোন নিয়ন্ত্রণ থাকে না। মানসিক ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায় এবং সাময়িক স্মৃতি বিভ্রম ঘটে।